পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

মেঘনাদবধ কাব্য।


 সকলেই কিছু নিজের মাথা হইতে গড়িতে পারে না, এইজন্যই ছাঁচের আবশ্যক হয়। সকলেই কিছু কবি নহে, এই জন্য অলংকার শাস্ত্রের প্রয়োজন। গানের গলা অনেকেরই আছে, কিন্তু গানের প্রতিভা অল্প লোকেরই আছে, এইজন্যই অনেকেই গান গাহিতে পারেন না, রাগ-রাগিণী গাহিতে পারেন।

 হৃদয়ের এমন একটা স্বভাব আছে, যে, যখনি তাহার ফুলবাগানে বসন্তের বাতাস বয় তখনি তার গাছে গাছে ডালে ডালে আপনি কুঁড়ি ধরে, আপনি ফুল ফুটিয়া উঠে। কিন্তু যার প্রাণে ফুলবাগান নাই, যার প্রাণে বসন্তের বাতাস বয় না, সে কী করে? সে প্যাটার্ণ কিনিয়া চোখে চশমা দিয়া পশমের ফুল তৈরি করে।

 আসল কথা এই, যে সৃজন করে তাহার ছাঁচ থাকে না, যে গড়ে তাহার ছাঁচ চাই। অতএব উভয়কে এক নামে ডাকা উচিত হয় না।

 কিন্তু প্রভেদ জানা যায় কি করিয়া? উপায় আছে। যিনি সৃজন করেন, তিনি আপনাকেই নানা আকারে ব্যক্ত করেন। তিনি নিজেকেই কখন বা রামরূপে, কখন বা রাবণরূপে, কখন বা হ্যাম‍্‍লেটরূপে, কখন বা ম্যা‍ক‍্‍বেথরূপে পরিণত করিতে পারেন– সুতরাং অবস্থাবিভেদে প্রকৃতিবিভেদ প্রকাশ করিতে পারেন। আর যিনি গড়েন তিনি পরকে গড়েন, সুতরাং তাঁর একচুল এদিক ওদিক করি