পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সঙ্গীত ও কবিতা।
৫৯

সারে পাঁচ বার করিয়া বসিবে, তাহারই নাম হইবে কবিতা বসন্ত– ও যদি কবিতাপ্রিয় ব্যক্তিগণ কবিদিগকে ফরমাস করিতেন, “ওহে চণ্ডিদাস, একটা কবিতা বসন্ত, ছন্দ ত্রিপদী আওড়াও ত!” অমনি যদি চণ্ডিদাস আওড়াইতেন–

বসন্ত মলয়ানিল, রজনীগন্ধা কোকিল,
দুরন্ত টগর সুধাকর–
মলয়ানিল বসন্ত, রজনীগন্ধা দুরন্ত,
সুধাকর কোকিল টগর।

 ও চারি দিক হইতে “আহা আহা” পড়িয়া যাইত, কারণ কথাগুলি ঠিক নিয়মানুসারে বসানো হইয়াছে – তাহা হইলে কবিতা কতকটা আধুনিক গানের মত হইত। ঐ কয়েকটি কথা ব্যতীত আর-একটি কথা যদি বিদ্যাপতি বসাইতে চেষ্টা করিতেন, তাহা হইলে কবিতাপ্রিয় ব্যক্তিগণ “ধিক্‌ ধিক্‌” করিতেন ও তাঁহার কবিতার নাম হইত “কবিতা জংলা বসন্ত।” এরূপ হইলে আমাদের কবিতার কি দ্রুত উন্নতিই হইত! কবিতার ছয় রাগ ছত্রিশ রাগিণী বাহির হইত, বিদেশবিদ্বেষী জাতীয়ভাবোন্মত্ত আর্যপুরুষগণ গর্ব করিয়া বলিতেন, উঃ, আমাদের কবিতায় কতগুলা রাগ-রাগিণী আছে, আর অসভ্য ম্লেচ্ছদের কবিতায় রাগ রাগিণীর লেশ মাত্র নাই।

 আমরা যেমন আজ কাল নবরসের মধ্যেই মারামারি করিয়া কবিতাকে বন্ধ করিয়া রাখি না, অলংকারশাস্ত্রোক্ত আড়ম্বরপূর্ণ নামের প্রতি দৃষ্টি করি না– তেমনি সংগীতে কতকগুলা নাম ও নিয়মের মধ্যেই যেন বদ্ধ হইয়া না থাকি। কবিতারও যে স্বাধীনতা আছে