পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬২
সমালোচনা

র্দ্দিকে ভাষার অনধিগম্য সমুদ্র। এ ক্ষুদ্র উপকূলে আমাদের হৃদয়ের বাসস্থান নয়। যখন কাজকর্ম সমাপ্ত করিয়া সন্ধ্যাবেলা এই সমুদ্রের তীরে আসিয়া দাঁড়াই, তখন মনে হয়, যেন ঐ সমুদ্রের পরপারে কোথায় আমাদের জন্মভূমি– কে জানে কোথায়? ঐ যে দূর দিগন্তে সূর্যের মৃদু রশ্মিরেখা দেখা যাইতেছে, তাহা যেন আমাদের জন্মভূমির দিক হইতে আসিতেছে। সে জন্মভূমির সকল কথা ভুলিয়া গেছি, অথচ তাহার ভাবটা মাত্র মনে আছে– অতি স্বপ্নময়, অতি অস্ফুট ভাব। ইচ্ছা করে ঐ সমুদ্রে সাঁতার দিই, সেই দূর দ্বীপ হইতে বাতাস ধীরে ধীরে আসিয়া আমাদের গাত্র স্পর্শ করে, সেই দূর দিগন্তের অস্ফুট সূর্যকিরণের দিকে আমাদের নেত্র থাকে, আর আমাদের পশ্চাতে এই ধূলিময় কীটময় কোলাহলময় উপকূল পড়িয়া থাকে। সাঁতার দিতে দিতে মনে হয় যেন পশ্চাতের উপকূল আর দেখা যাইতেছে না ও সম্মুখে সেই দূর দেশের তটরেখা যেন এক-একবার দেখা যাইতেছে ও আবার মিলাইয়া যাইতেছে। সমস্তদিন কাজকর্ম করিয়া আমরা বিশ্রামের জন্য কোথায় আসিব? এই সমুদ্রকূলেই কি নহে? সমস্তদিন দোকান বাজারের মধ্যে, রাস্তা গলির মধ্যে থাকিয়া, দুই দণ্ড কি মুক্ত বায়ু সেবন করিতে আসিব না? আমরা জানি যে, যেখানে সীমা আরম্ভ সেইখানেই আমাদের কাজকর্ম যুঝাযুঝি ও অসীমের দিকে আমাদের বিশ্রামের স্থল আছে– সেই দিকেই কি আমরা মাঝে মাঝে নেত্র ফিরাইব না? সে অসীমের দিকে চাহিলে যে অবিমিশ্রিত সুখ হয় তাহা নহে, কোমল বিষাদ মনে আসে। কারণ, সে দিকে চাহিলে আমাদের