পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

হিসাবে তেমনি সত্য; উভয়ই বিভিন্ন অথচ উভয়ই সত্য হইতে পারে। গোলাপ ফুল যদি তাহার প্রতিবেশী পাতাকে সূর্যকিরণে সবুজ হইতে দেখিয়া মনে করে, সূর্যকিরণে আমারও সবুজ হওয়া উচিত ও সবুজ হইয়া উঠাই যদি তাহার জীবনের একমাত্র ব্রত হয়, তাহা হইলে নিশ্চয়ই ফুলমণ্ডলী তাহাকে পাগল বলিয়া আশঙ্কা করে।

 De Profundis কবিতাটি কবির সন্তানের জন্মোপলক্ষে লিখিত। সন্তানের জন্মোপলক্ষে লিখিত কবিতা সাধারণত লোকে যে ভাবে পড়িতে যায়, এই কবিতায় সহসা তাহাতে বাধা পায়। কচি মুখ, মিষ্ট হাসি, আধ-আধ কথা ইহার বিষয় নহে। একটি ক্ষুদ্রকায়া সদ্যোজাত শিশুর মধ্যে মিষ্টভাব কচিভাব ব্যতীত আরেকটি ভাব প্রচ্ছন্ন আছে, তাহা সকলের চোখে পড়ে না কিন্তু তাহা ভাবুক কবির চক্ষে পড়ে। সদ্যোজাত শিশুর মধ্যে একটি অপরিসীম মহান্‌ ভাব, অপরিমেয় রহস্য আবদ্ধ আছে, টেনিস্‌ন্‌ তাহাই প্রকাশ করিয়াছেন, সাধারণ পাঠকেরা তাহা বুঝিতে পারিতেছে না অথবা এই অচেনা ভাব হৃদয়ের মধ্যে আয়ত্ত করিতে পারিতেছে না।

 Tennyson এই কবিতাটিকে “The Two Greetings” কহিয়াছেন। অর্থাৎ, ইহাতে তাঁহার সন্তানটিকে দুই ভাবে তিনি সম্ভাষণ করিয়াছেন। প্রথমত, তাঁহার নিজের সন্তান বলিয়া; দ্বিতীয়ত, তাঁহার আপনাকে তফাত করিয়া। এক, তাহার মর্ত জীবন ধরিয়া, আর-এক তাহার অস্তিত্ব ধরিয়া। একটিতে, তাহাকে আংশিক ভাবে দেখিয়া, আর একটিতে তাহাকে সর্বতোভাবে দেখিয়া। তাঁহার সন্তানের মধ্যে তিনি দুইটি ভাগ দেখিতে পাইয়াছেন;