পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাব্যের অবস্থা পরিবর্তন।
৮৩

হইতেছে, অনেকদিন হইতে অনেক কবি তাহার একটু একটু করিয়া লিখিয়া আসিতেছেন। পাঠকেরাই এই মহাকাব্যের বেদব্যাস। তাঁহারা মনের মধ্যে সংগ্রহ করিয়া সন্নিবেশ করিয়া তাহাকে একত্রে পরিণত করিতেছেন। যে কেহ ইহার একটি মাত্র অংশ দেখেন অথবা সকল অংশগুলিকে আলাদা করিয়া দেখেন, তিনি নিতান্ত ভ্রমে পড়েন। তিনি বলেন, সভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে কাব্য অগ্রসর হইতেছে না। তিনি কী করেন, না, একটি সাধারণতন্ত্রের শাসনপ্রণালীর প্রতিনিধিগণের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করিয়া দেখেন। দেখেন রাজার মতো প্রভূত ক্ষমতা কাহারও হস্তে নাই, রাজার মতো একাধিপত্য কেহ করিতে পায় না, ও তৎক্ষণাৎ এই সিদ্ধান্ত করিয়া বসেন যে, “দেশের রাজ্যপ্রণালী ক্রমশই অবনত হইয়া আসিতেছে। সভ্যতা বাড়িতেছে বটে কিন্তু রাজতন্ত্রের উন্নতি কিছুই দেখিতে পাইতেছি না। বরঞ্চ উল্টা!” কিন্তু সভ্যতা বাড়িতেছে বলিলেই বুঝায় যে, জ্ঞানও বাড়িতেছে, কবিতাও বাড়িতেছে।

 রাজতন্ত্র যখন খুব জটিল ও বিস্তৃত হয়, তখন সাধারণতন্ত্রের বিশেষ আবশ্যকতা বাড়ে। যত দিন ছোটখাট সোজাসুজি রকম থাকে তত দিন সাধারণতন্ত্রের ন্যায় অতবড় বিস্তৃত রাজ্যপ্রণালীর তেমন আবশ্যকতা থাকে না। এক রাজার আর যখন চলে না তখন সে রাজায় দিন ফুরায়। য়ুরোপে তাহাই হইয়া আসিয়াছে। কবিতার রাজ্য অত্যন্ত বিস্তৃত হইয়া উঠিয়াছে। বৃহত্তম অনুভাব হইতে অতি সূক্ষ্মতম অনুভাব, জটিলতম অনুভাব হইতে অতি বিশদতম অনুভাব সকল কবিতার মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছে। এখনকার কবিতায় এমন