পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ সারিয়া ফিরিয়া আসিলে কোথায় হাসিমুখে তাদের অভ্যর্থনা করিবে, তীর্থযাত্রার গল্প শুনিবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠিবে, একটি প্রশ্ন করিয়াই নীলা কঁাদিয়া ভাসাইয়া দিল । ‘সমুন্দরে চান করেছ বাবা ?” গাড়ী হইতে নামিয়া সবে ঘরে পা দিয়াছেন, নীলার বাবা বসিয়া বলিলেন, ‘করেছি। রে, করেছি। একটু দাড়া, জিরিয়ে নিই, বলব’খন সব ।” কি বলিবেন ? কি প্রয়োজন আছে বলিবার ? নীলা কি পুরীর সমুদ্র-ম্যানের বর্ণনা শোনে নাই ? বলাইদের বাড়ার তিনতালার ছাতে উঠিয়া চারিদিকে যেমন আকাশ পৰ্য্যন্ত ছড়ানো স্থির অনড় রাশি-রাশি বাড়ী দেখিতে পায়, তেমনি সীমাহীন জলরাশিতে বাড়ীর সমান উঁচু ঢেউ উঠতেছে নামিতেছে আর তীরের কাছে বালির উপর আছড়াইয়া পড়িয়া সাদা ফেনা হইয়া যাইতেছে, এ কল্পনায় কোথাও কি এতটুকু ফাকি আছে নীলার ? কেবল চোখে দেখা হইল না, এই যা। বাপের ‘আদুরে মেয়ে সে, অন্তত সকলে তাই বলে, তার সমুদ্র দেখা হইল না, কিন্তু বাপ তার সমুদ্ৰ দেখিয়া, স্নান করিয়া ফিরিয়া আসিল । নীলা তাই কঁাদিয়া ফেলিল । বাবা তাড়াতাড়ি আবার প্রতিজ্ঞা করিলেন, “পূজোর সময় যেমন ক’রে পারি তোকে সমুদ্ৰ দেখিয়ে আনব নীলা, ধার করতে হ’লে তাও করব। কঁাদিস নে নীলা, সারারাত গাড়ীতে ঘুমাতে পাইনি, দোহাই তোর, কঁাদিসনে ৷” সমুদ্র দেখাইয়া আনিবার বদলে পূজার সময় নীলাকে কঁাদাইয়া তিনি স্বৰ্গে চলিয়া গেলেন। বলাই বাহুল্য যে, এবার সমুদ্র দেখা হইল না বলিয়া নীলা কঁাদিয়া কঁাদিয়া চোখ ফুলাইয়া চোখের জলের নোনতা \O)