পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ “কোথায় পড়ল। তবে ? এইটুকু মোটে গেছি, বিড়ির দোকান পর্যন্ত । এক পয়সার বিড়ি কিনব বলে পকেটে হাত দিয়েই দেখি ব্যাগ নেই।” ঘনশ্যাম আরও বেশী মরার মত বলিল ‘রাস্তায় পড়েছে মনে হয় । পড়ামাত্র হয়তো কেউ কুড়িয়ে নিয়েছে।” “তই হবে। কিন্তু এইটুকু সময়ের মধ্যে রাস্তায় পড়ল, একজন কুড়িয়ে নিল । পকেট থেকে পড়বেই বা কেন তাই ভাবছি।” “যখন যায়, এমনিভাবেই যায়। শনির দৃষ্টি লাগলে পোড়া শোল মাছ পালাতে পারে ।” “তাই দেখছি। বিনা চিকিৎসায় ছেলেটা মারা যাবে।” ঘনশ্যামের মুখের চামড়ায় টান পড়িয়া সির সিরা করিতে থাকে। অশ্বিনীর সোনার ঘড়িটা পকেটে ভরিবার পর এমনি হইয়াছিল। এখনও ধ্যাগটা ফিরাইয়া দেওয়া যায়। অসাবধান বন্ধুর সঙ্গে এটুকু তামসা করা চলে, তাতে দোষ হয় না। তবে দশটা টাকা দিলেও ডাক্তার নিয়া গিয়া ও ছেলেকে দেখাইতে পরিবে। দশ টাকায় মণিমালার যদি চিকিৎসা হয়, ওর ছেলের হইবে না কেন । শ্ৰীনিবাস নীরবে নোটটি ফিরিয়া নিল। পকেটে রাখিল না, মুঠা করিয়া ধরিয়া বসিয়া রহিল । সমান বিপন্ন বন্ধুকে খানিক আগে যাচিয়া যে টাকা দিয়াছিল সেটা ফিরাইয়া নেওয়ার সঙ্গতি অসঙ্গতির বিচার হয়তো করিতেছে। নিরুপায় দুঃখে, ব্যাগ হারানোর দুঃখ নয়, এই দশ টাকা ফেরত নিতে হওয়ার দুঃখে, হয়তে ওর কান্না আসিবার উপক্রম হইয়াছে। ওর পক্ষে কিছুই আশ্চৰ্য নয়। ঘনশ্যাম মমতা বোধ করে । ভাবে, মিছামিছি। ওর মনে কষ্ট দেওয়া উচিত নয় । ‘গোটা পচিশোক টাকা যোগাড় করতে পারব শ্ৰীনিবাস।” SoV