পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ সত্যপ্ৰসাদ কিন্তু তাকে বুকে না নিয়া ছাড়িলেন না। ট্যাক্সির এককোণে সে মুখ গুজিয়া বসিয়া ছিল, হঁপাইতে হঁপাইতে পাশে বসিয়া দু'হাতে তাকে জড়াইয়া ধরিলেন। ব্যাকুলভাবে বলিতে লাগিলেন, “তাতে কি হয়েছে বাবা, তাতে কি হয়েছে। একবার দু’বার ভুল করলে কি হয় ? এ বয়সে সবাই ভুল করে। আমিও করেছি ' সত্যপ্ৰসাদ মদের স্বাদ কেমন জানেন না । পণ্য নারীর ঘরের ভিতরের দৃশ্য জীবনে আজ প্রথম দেখিলেন। পরদিন ছেলেকে সঙ্গে করিয়া তিনি বাড়ী ফিরিলেন । ছেলের চেহারা দেখিয়া মা কঁাদিয়া ফেলিলেন। অন্য সকলে স্তব্ধ বিস্ময়ে ভাবিতে লাগিল, চার মাস আগে কি ছেলে কলিকাতায় গিয়াছিল, অসুখ বিসুখ কিছু হয় নাই। তবু কি হইয়া ফিরিয়া আসিয়াছে। তারপর দিন কাটিতে লাগিল। মিহিরের সম্বন্ধে সকলেই হাল ছাড়িয়া দিল। এ ছেলের কাছে আর কিছু আশা করা যায় না। শুধু এইটুকু ভরসা যে অলস অকৰ্মণ্য খেয়ালী উদাস জীবনটা সে যাপন করিতেছে । বাড়িতে । অন্যভাবে গোল্লায় যাওয়ার ঝোকটা কাটিয়া গিয়াছে। সংসারের সঙ্গে মিহিরের যেন কোন যোগ নাই, এতলোকের মধ্যে সে একা হইয়া গিয়াছে। কারও সঙ্গ তার ভাল লাগে না । স্নেহমমতা, আদর যত্ন কিছুই চায় না। নিজের ঘরে শুইয়া বসিয়া সে সময় কাটায়, অসময়ে বাহির হইয়া উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরিয়া বেড়ায়, চার মাইল দূরে ভাসাই নদীর ধারে গিয়া চুপ করিয়া বসিয়া থাকে। কোথাও কোন অবস্থাতেই আর বাহিরের জগতের সঙ্গে সে সম্পর্ক যেন খুঁজিয়া পাওয়া যায় না, অল্পদিন আগেও যা বজায় ছিল। ??)8