পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ স্বাদে আর সবকিছুর স্বাদ ডুবাইয়া দিল না, কঁাদিল সে বাপের শোকেই। কেবল সে এক নয়, বাড়ীর সকলেই কঁাদিল । কিছুদিনের জন্য মনে হইল, একটা মানুষ, বিশেষ অবস্থার বিশেষ বয়সের বিশেষ একটা মানুষ, চিরদিনের জন্য নীলার মনের সমুদ্রের মত দুৰ্ব্বোধ্য ও রহস্যময় একটা সীমাহীন কিছুর ওপারে। চলিয়া গেলে, সংসারে মানুষের কান্না ছাড়া আর কিছুই করিবার থাকে না। ছেলেবেলা হইতে আরও কতবার নীলা কঁাদিয়াছে। বাড়ীর শাসনে কঁাদিয়াছে, অভিমানে কঁাদিয়াছে, খেলার সার্থীর সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ায় কঁাদিয়াছে, পেটের ব্যথায়, ফেঁাড়ার যাতনায় কঁাদিয়াছে, সমুদ্র দেখার সাধ না মেটায় কঁাদিয়াছে, অকারণেও সে দু’চারবার কঁাদে নাই এমন নয়। এমন কষ্ট হয়। কঁাদিতে। --দেহের কষ্ট, মনের কষ্ট । শরীরটা যেন ভারি হইয়া যায়, জর হওয়ার মত সর্বাঙ্গে অস্বস্তিকর ভোতা টনটনে যাতনা বোধ হয়, চিন্তাজগৎটা যেন বর্ষাকালের আকাশের মত ঝাপসা হইয়া যায়, একটা চিরস্থায়ী ভিজা স্যাতসেঁতে ভাব থমথম করিতে থাকে। শরীর ও মন দু'রকম কষ্টেরই আবার স্বাদ আছে,-বৈচিত্র্যহীন আলুনি এবং কড়া নোনতা স্বাদ । স্বাদটা অনুভব করিবার সময় নীলার লাগে একরকম, আবার কল্পনা করিবার সময় লাগে অন্যরকম-রক্তের স্বাদের মত। ছুরি দিয়া পেন্সিল কাটিতে, বঁট দিয়া তরকারী কুটিতে, কোন-কিছু দিয়া টিনের মুখ খুলিতে, নিজের অথবা ভাইদের আঙুল কাটিয়া গেলে তার প্রচলিত চিকিৎসার ব্যবস্থা অনুসারে নীলা কাটাস্থানে মুখ দিয়া চুষিতে আরম্ভ করে,-রক্তের স্বাদ তার জানা আছে। নীলার বাবার মৃত্যুর পর সকলে মামাবাড়ী গেল। বিয়ের যুগ্যি 8