পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ তঁাকে প্ৰণাম করা গেল না। শায়িত অবস্থায় মানুষকে প্ৰণাম করিলে তার অকল্যাণ হয়, একেবারে চরম অকল্যাণ । কারণ, শোয়া বসা যখন সমান হইয়া যায়। তখনই মানুষকে এ অবস্থায় প্ৰণাম করা হয় । কঠোর নীরস জীবনের প্রতীকের মত শুকনো চামড়ায় ঢাকা ভদ্রলোকের মুখের হতাশা সাতদিনের খোচা খোচা কঁচা পাক, দাড়ি আড়াল করিতে পারে নাই, জ্বরের ঘোরের প্রলাপেও চোখের তীব্র প্ৰতিবাদ চাপা পড়ে নাই। তবু এখনো তার অমঙ্গলের আশঙ্কা আছে। ছোট বড় সব রকম অমঙ্গলের আশঙ্কা। মিহিরের সঙ্গে দু’একটি কথা বলিয়াই তিনি শুইয়া শুইয়া চড়া গলায় তাগিদ জানাইতে আরম্ভ করেন, “কি করছ তোমরা, তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও ? আমি যেতে পারছি না, তোমরাও দেরী করে যাবে, এক ফোটা আক্কেল কি কারো নেই তোমাদের ? আরও সর্বনাশ ঘটাতে চাও মানুষটাকে চটিয়ে ?” জহরের মা বলেন, “এই যাই, ওরা কাপড় পরছে।” কতক্ষণ লাগবে কাপড় পরতে ? সর্বনাশ করবে তোমরা । আমার সর্বনাশ করবে।” মিহিরকে আশীৰ্বাদ করার কাজটা তাড়াতাড়ি করিয়া তিনিও বিয়ে বাড়ীতে নিমন্ত্রণ রাখিতে যাওয়ার জন্য প্ৰস্তুত হইতে গেলেন। জহরের দাদা মনোহর বোধ হয় তাদের সঙ্গে নিয়া যাইবে, ফর্স পাঞ্জাবী গায়ে দিয়া কঁধে চাদর ফেলিয়া সে প্ৰস্তুত হইয়া মোড়ায় বসিয়া আছে। গম্ভীর নির্বাক লোকটির বসিবার ভঙ্গিতে পর্যন্ত যেন ক্ষোভ রূপ ধরিয়া আছে। মিহিরকে দেখিয়াও এতক্ষণ একটি কথা বলে নাই। মিহির নিজেই কাছে গিয়া সবিনয়ে জিজ্ঞাসা করিল, “কেমন আছেন মনুদা ? S8ir