পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ রসময়ের বয়স প্ৰায় পঞ্চাশ, মোটাসোটা ভারিকি চেহারা, একটু ভূড়িও আছে। মাথার অর্ধেকের বেশী চুল তার সাদা, গোলগাল তেলতোলা মুখে চ্যাপ্টা চিবুকের উপর চোখা নাক। সকলের হাসিতে যোগ না দিলেও তার ঠোঁটে একটু টান পড়ে, মুখের স্বাভাবিক, মৃদু অমায়িক ভাব গভীর ও স্পষ্ট হইয় ওঠে। মুখের এই পরিবর্তনকে মুচকি হাসি নাম দিলেও দেওয়া যাইতে পারে। তবু, রতন ষে আগাগোড়া মুখ গোমড়া করিয়া চাহিয়া থাকে, কেউ তা এক রকম খেয়ালও করে না, রসময়ের হাসির অভাবটাই সকলের নজরে পড়ে । নিজের রসিকতায় বিপিন নিজে কদাচিৎ হাসে, তবু সে মাঝে মাঝে চটিয়া যায়। আড়ালে বন্ধুদের বলে, “হাসবে কি, লোকটা বড় ভোতা । রসজ্ঞান নেই।” পেনসনভোগী উমাচরণ রসিকতা করিয়া বলে, “ভোতা ? রসজ্ঞান নেই ? এই বয়সে যে আমন একটি সুন্দরী তরুণীর পাণিগ্রহণ করতে পারে, তার মত চোখ আর রসে টইটম্বর কে আছে!’ বলিয়া শীর্ণ গলার জীর্ণ আওয়াজ চরমে তুলিয়া রাস্তার মাঝখানে দাড়াইয়াই সশব্দে হাসিতে আরম্ভ করে। হাসিতে হাসিতে উৎসুক দৃষ্টিতে রাস্তার আলোয় সঙ্গীদের প্রত্যেকের মুখের দিকে চাহিয়া দুস্তাখে। কারও মুখে হাসির চিহ্ন নাই দেখিয়া হঠাৎ নিজেও থামিয়া যায়। বিপিনের প্ৰায় প্রত্যেকটি রসিকতায় সকলে হাসে কিন্তু তার আরও জোরালো আরও যোগসই রসিকতাগুলিকে কেউ আমল দেয় না কেন উমাচরণ বুঝিতে পারে না। ঈর্ষায় তার বুক জ্বলিয়া যায়। সকলকে হাসানোর কত চেষ্টাই যে সে করে। SS