পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ রতন আসিয়া বলিল, “আপনাকে ডাকছে।” বলিয়াই হাসিয়া ফেলিল । রসময় জিজ্ঞাসা করিল, “কি হয়েছে ? হাসছ যে ?” রতনের হাসি যেন থামিতে চায় না। রসময়কে সে ভয় করে, শ্রদ্ধা করে, সামনে দাড়াইয়া কথা বলিতে গেলে মুখে কথা আটকাইয়া যায়। কিন্তু কি যেন এক কৌতুককর ব্যাপার ঘটিয়াছে যার ফলে রসময়ের ভৎসনাভিরা দৃষ্টির সামনেও বেয়াদপের মত না হাসিয়া সে পারিতেছে না। তবে রসময় ধমক দিতেই সাউণ্ড বক্সের স্পর্শবঞ্চিত রেকর্ডের মত তার হাসি হঠাৎ থামিয়া গেল, সুইচ টিপিয়া বৈদ্যুতিক বাতি নেভানোর মত মুখে কৌতুকের দীপ্তি ঘুচিয়া দেখা দিল কালো ভয়ের ছাপ। আমতা ? মতা করিয়া সে বলিল, “আজ্ঞে না, কিছু না, এমনি । সিড়ি দিয়ে উঠবার সময় পাটা হঠাৎ এমন পিছলে গেল-” ‘তাতে হাসবার কি আছে ?” অন্য সময় রতন হয়তো কোন কৈফিয়ৎ দিবার চেষ্টা না করিয়াই চম্পট দিত, এমন একটু উদভ্ৰান্ত হইয়া পড়ায় বোকার মত বলিল, “প্ৰথমে বুকটা ধড়াস ধড়াসা করছিল, তারপর নতুন কাকীমার বাবার কথা মনে পড়ে হঠাৎ কি যে হল--” রতন করুণ দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকে। একি কখনো মানুষকে বুঝানো চলে, ব্যাখ্যা করা চলে, কেন সে হাসিয়াছে ? কারণটাই যে অর্থহীন, যুক্তিহীন, খাপছাড়া ! রসময়ের মনে পড়িয়া যায়, আজ সকালে রাণীর বিপুলদেহ পিতৃদেব, তার নতুন শ্বশুৰামশায়, মেয়েকে দেখিতে আসিয়া পা পিছলাইয়া সিড়িদিয়া গড়াইয়া পড়িয়া গিয়াছিল। নীচে পড়িয়া সেই বয়স্ক স্থূল মানুষটির কী কান্না ! রতন তাকে সঙ্গে করিয়া ভিতরে আনিয়াছিল, তার হাস্যকর পতন ও ক্ৰন্দন দেখিয়াছিল, হাত >Qぐ。