পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ কান্নার মৃতসঞ্জীবনী যেন হঠাৎ মৃতপ্ৰায় দেহে মনে জীবন আনিয়া দিয়াছে এমনি ভাবে অনাদি তাকে আদর করে, ব্যাকুল হইয়া জানিতে চায়, কেন কঁাদিতেছে নীলা, কি হইয়াছে নীলার ? এখানে কেউ গালমন্দ দিয়াছে ? মা-বোনের জন্য মন কেমন করিতেছে ? অনাদি নিজে না জানিয়া মনে কষ্ট দিয়াছে তার ? একবার শুধু মুখ ফুটিয়া বলুক নীলা, এখনি অনাদি প্ৰতিকারের ব্যবস্থা করিবে। কিন্তু কি বলিবে নীলা, বলার কি আছে ? সে কি নিজেই জানে, কেন সে কঁাদিতেছে ? আগে প্ৰত্যেকটি কান্নার কারণ জানা থাকিত, কোন কান্না বকুনির, কোন কান্না অভিমানের, কোন কান্না শোকের, আর কোন কান্না সমুদ্র দেখার সাধের মত জোরালো অপূর্ণ সাধের। আজকাল সব যেন একাকার হইয়া গিয়াছে। কান্নার সমস্ত প্রেরণাগুলি যেন দল বাধিয়া চােখের জলের উৎস খুলিয়া দেয়। সেদিন অনাদি ভাবে, কান্নার কারণ অবশ্যই কিছু আছে, নীলা মুখ ফুটিয়া বলিতে পারিল না। পরদিন আবার তাকে কঁাদিতে দেখিয়া সে রীতিমত ভড়কাইয়া যায়, কান্নার কারণটা তবে তো নিশ্চয় গুরুতর । আরও বেশী আগ্রহের সঙ্গে সে কারণ আবিষ্কারের চেষ্টা করে এবং কিছুই জানিতে না পারিয়া সেদিন তার একটু অভিমান হয় । তারপর দু’দিন নীলা কঁদে কিনা সেই জানে, দাতের ব্যথা আর মাথার যন্ত্রণায় বিব্রত থাকায় অনাদি টের পায় না । পরদিন আবার নীলার কান্না সুরু হইলে রাগ করিয়া অনাদি বলিল, “কি হয়েছে যদি নাই বলবে, বারান্দায় গিয়ে কঁাদো, আমায় জালিও না ।” এতক্ষণ কঁদিবার কোন প্ৰত্যক্ষ কারণ ছিলনা, এবার স্বামীর একটা কড়া ধমক খাইয়া নীলা অনায়াসে আরও বেশী আকুল হইয়া So