পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভিক্ষুক অজানা অচেনা মানুষকে সঙ্গী করিয়া পথে চলিবার আশঙ্কাটাই এতক্ষণ যাদবের মনে প্ৰবল হইয়াছিল, এখন তার মনে হইতে থাকে, যেমন হোক একজন রক্তমাংসের সঙ্গী থাকিলেই ভাল হইত। এরকম কত অন্ধকার রাত্রির সঙ্গে তার পরিচয় ঘটিয়াছে, কিন্তু অন্ধকারের মধ্যে যে এতকিছু দ্রষ্টব্য থাকে, স্তব্ধতার মধ্যে এত শব্দ শোনা যায় আর নির্জনতার মধ্যে এমন সব উপস্থিতি অনুভব করা যায়, কোন দিন তার জানা ছিল না । যাদব থমকিয়া দাড়ায়। একবার ভাবে, ফিরিয়া গিয়া বস্তি হইতে পয়সা কবুল করিয়া একজন লোক সংগ্ৰহ করিয়া আনিবে কিনা। আবার ভাবে, ভূতের ভয়ে কাবু হইয়া আবার এতটা পথ ফিরিয়া যাইবে ? রাম নাম জপ করিতে করিতে চোখ কাণ বুজিয়া কোন রকমে গন্তব্য স্থানে গিয়া পৌছানো যাইবে না ? ভাবিতে ভাবিতে প্ৰকৃতিগত ভীরুতার ঠেলায় কখন যে ষ্টেসনের দিকে জোরে জোরে হাটতে আরম্ভ করিয়া দেয় নিজেই ভাল করিয়া টের পায় না । এমন সময় জোটে তার সঙ্গী। রক্ত মাংসের লম্বা চওড়া বিরাট দেহ সঙ্গী । দূর হইতে মানুষটাকে আগাইয়া আসিতে দেখিয়াই যাদবের বুকের মধ্যে প্রথমটা ধড়াস করিয়া ওঠে। কয়েক মূহুর্ভের জন্য সৰ্ব্বাঙ্গ আড়ষ্ট হইয়া যায়। তারপর তাকে দেখিতে পাইয়া আগন্তুক যখন ডাক দিয়া জিজ্ঞাসা করে সে কে, দেহে ম্নে জীবন ফিরিয়া আসে এবং কাছে আগাইয়া আসিলে গায়ে পাঞ্জাবী, কঁধে চাদর আর পায়ে জুতা দেখিয়া ফিরিয়া আসে চিন্তা করার ক্ষমতা । “মশায় যাবেন কোথা ?” “সোদপুর।” X6