পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ কষ্টকর ব্যাপার । কাজের উপর বিতৃষ্ণ তার ছিল চিরদিনই, এখন মনে হয়, খাটুনি যেন বড় বেশী বাড়িয়া গিয়াছে। মানুষ এত খাটিতে পারে ? এতকাল মাস গেলে বেতনের টাকাটা হাতে পাইয়া সে বড় পুসী হইত, আজকাল ক্ষুঃ হইয়া ভাবে, ত্ৰিশ একত্রিশ দিন প্রাণান্তকর পরিশ্রমের বিনিময়ে মোটে এই কটা টাকা । সহজে টাকা রোজগার করার কি কোন উপায় নাই, সেদিন রাত্রে কিছুক্ষণ শুধু বক বক করিয়া যেমন দশ দশটা টাকা রোজগার করিয়া ফেলিয়াছিল ? ভাবিতে ভাবিতে তার মনে হয়, দয়ালু লোক কি জগতে সেই একজনই ছিল, আর নাই সহরের এই লাখ লাখ লোকের মধ্যে ? মৰ্মস্পর্শী করিয়া দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী সে কি একেবারই বলিতে পারিয়াছিল, আর পরিবে না ? জনহীন প্ৰান্তরের সেই বিশেষ পারিপাশ্বিক অবস্থাটি হয় তো জুটিবে না, পথ চলিতে চলিতে একজনকে অতক্ষণ ধরিয়া দুঃখের কাহিনী শোনানো যাইবে না, একেবারে দশটাকা দান করিয়া বসার মত উদারতাও হয়তো কারও জাগিবে না, তবু যেমন অবস্থায় যতটুকু শোনানো যায়। আর যতটুকু উদারতা জাগানোর ফলে যা পাওয়া যায় ? কাজের শেষে একদিন বাড়ী ফেরার সময় সিল্কের পাঞ্জাবী পরা এক ভদ্রলোককে যাদব বলিয়া বসে, “দেখুন, আমি বড় বিপদে পড়েছি।--” এক নজর চাহিয়াই সিস্কের পাঞ্জাবী পরা ভদ্রলোক সিগারেট টানিতে টানিতে জোরে হঁটিয়া আগাইয়া যায়। রাগে দুঃখে৷ অপমানে যাদবের গ’টা যেন জ্বালা করিতে থাকে। গভীর হতাশাতেও তার মনটা ভারিয়া যায়। একটু দাড়াইয়া শুনিল না পৰ্য্যন্ত সে কি বিপদে পড়িয়াছে, মুখ বাকাইয়া গট গট করিয়া চলিয়া গেল ! SQ o