পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুজা কমিটী মধ্যে সাধারণ গল্পগুজব চালাইতে থাকিলেও বেশ বুঝিতে পারা যায় নিজের নিজের গুরুত্ব সকলেই উপলব্ধি করিতেছেন। সকলের ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করিয়া বিকাশের মুখে মৃদু একটু হাসি দেখা দেয়। পাড়ার এক ভদ্রলোকের বাড়ীর লনে পাড়ার লোকের সভা না হইয়া গড়ের মাঠে সর্বসাধারণের সভা হইলে ভিড়ের মধ্যে ছেড়া-ময়লা জামা কাপড় পরিয়াণ্ড নির্বিবাদে সকলে বসিয়া থাকিতে পারিতেন, এ-রকম মৃদু চাঞ্চল্য, উত্তেজনা ও অস্বস্তির ভােব কারও মধ্যে দেখা যাইত না। ব্যক্তিগত ভাবে সেখানে এরা সকলেই তুচ্ছ, দশজনের একজন মাত্র। কিন্তু এখানে প্ৰত্যেকেই যেন এক একজন লাটসায়েব। ভিখারী সত্যসত্যই নিজের ভাঙ্গা কুটীরের রাজা । গগনবাবু প্ৰস্তাব করিলেন যে, কেদারবাবুকে প্রেসিডেণ্ট করিয়া সভার কাজ আরম্ভ করা হোক। কেদারবাবুর বয়স প্রায় ষাট-মদ, গাজা, আফিম সংক্রান্ত সরকারী কাজে জীবন কাটাইয়া পেন্সন ভোগ করিতেছেন। ভিতরে ভিতরে ভদ্রলোকের কেমন একটা সংস্কার জন্মিয় গিয়াছে যে, তিনি আর তার স্ত্রী ছাড়া পৃথিবীর সমস্ত পুরুষ ও নারীই নেশাখের। প্রেসিডেণ্ট হওয়ার প্রস্তাবে ভিতরে ভিতরে পুলকিত হইয়াছেন, স্পষ্টই বুঝা গেল, মুখে তবু প্ৰতিবাদ করিতে ছাড়িলেন না“আহা, আহা, আমাকে কেন, আমাকে কেন। এত সব যোগ্য ব্যক্তি থাকতে এত বড় দায়িত্ব-আমি বুড়ো মানুষ-” গগনবাবু ভরসা দিয়া বলিলেন, “এতো আমাদের ঘরোয় মিটিং কেদারবাবু, আপনাকে কিছু করতে হবে না। শুধু আপনার নামটা থাকবে, মিটিং-এ আপনি প্রেসিডেণ্ট হয়েছিলেন।” কেদারবাবু বলিলেন, “ও, শুধু মিটিং-এর প্রেসিডেন্ট।” মুখের চামড়া একটু টিল হইয়া আসিয়াছে, রেখাগুলি স্পষ্টই চোখে NONS)