পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আপিম প্ৰায় সে ভাবটা শেষ হইয়া গিয়াছে। এখন মনে হইতেছে, মোটে চারগণ্ডী পয়সা চাহিয়াছিল, না দেওয়া কি উচিত হইয়াছে ? একদিনে আপিম ছাড়া আপিমখোরের পক্ষে সম্ভব নয়, একথাও সত্য। মনে কর, হরেন যদি সত্যসত্যই কমাইয়া কমাইয়া ধীরে ধীবে আপিম ছাড়িয়া দেয়, আবার উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়া ভাল একটা কাজ সংগ্ৰহ করিয়া ফেলে এবং আজকের ব্যাপারের জন্য তাকে কোনদিন ক্ষমা না করে ? কোনদিন যদি তাকে আর টাকা পয়সা কিছু না দেয় ? কাজে নরেনের তুল হইয়া যাইতে থাকে। হরেন যখন বড় চাকুরী করিতেছিল তখনকার সেই সুখের দিনগুলির কথা মনে ভাসিয়া আসিতে থাকে। কি আরামেই তখন সে ছিল । কোন ভাবনা ছিল না, কোন অভাব ছিল না, নিজের বেতনের প্রায় সব টাকাই নিজের সুখের জন্য খরচ করিলেও কিছু আসিয়া যাইত না। আজ চারিদিকে টানাটানি, কেবল অভাব আর অভিযোগ, দিনে পাচটির বেশী সিগারেট খাওয়ার পর্য্যন্ত তার উপায় নাই, বিড়ি টানিতে হয়! আপিমের নেশােটা ছাড়িয়া হরেন যদি আবার...... টিফিনের সময় মুখে খোচা খোচা দাড়ি, একমাথা ঝাঁকড়া চুল লইয়া মাঝবয়সী একটি লোক আসিয়া বলিল, “এমাসে নেবেন তো ? আপনার জন্যে বাছা বাছা নম্বর রেখেছি।--সব কটা জোড় সংখ্যা, একটা বিজোড় নেই। এই দেখুন, চার, আট, ছয়-” ছ’টি লটারীর টিকিট বাহির করিয়া সে নরেনের হাতে দেয়। নরেন নিঃশ্বাস ফেলিয়া বলে, “কিনছি তো প্রত্যেক মাসে, লাগছে। रुशे !' প্ৰথমে তিনখানা, তারপর জোড়াসংখ্যার টিকিট কেনা ভাল মনে করিয়া চারিখানা টিকিট রাখিয়া নরেন একটি টাকা বাহির করিয়া দিল । $36