পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ পাইতেছিল না, হরেন পাঁচটা টাকা দেওয়ায় এই দুশ্চিন্তার হাত হইতে সে রেহাই পাইয়াছে। বাজারের পয়সা পর্যন্ত না রাখিয়া দুটাকা দিয়া লটারীর টিকিট কিনিয়াছে, এই চিন্তাটাও মনের মধ্যে বড় বেশী বিধিতেছিল। হাজার পঞ্চাশেক টাকা পাইয়া গেলে যে কি মজাটাই হইবে, এ কল্পনায় যেন তেমন সুখ হইতেছিল না। এবার চোখ বুজিয়া নিশ্চিন্ত মনে কল্পনাকে আমল দেওয়া সম্ভব হইয়ছে। পড়ার টেবিলের সামনে বসিয়া বিমল ভাবিতে থাকে, এতরাত্রে সে যে কষ্ট করিয়া তার খাওয়ার জন্য দুধ কিনিয়া আনিয়াছে, পাকে প্রকারে জ্যেঠা মহাশয়কে এখবরটা জানাইয়া দিতে পারিলে বোধ হয় ভাল হইত। সকালের ব্যাপারে জ্যোঠামশায় যদি চটিয়া থাকে, কথাটা শুনিয়া খুন্সী হইতে পারে। খুলী হইলে হয়তো রাত্রির মত মায়ার সংসারের হাঙ্গামা চুকিতে এগারটা বাজিয়া গেল। হরেন তখন ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। অন্যদিন সন্ধ্যার পরেই নেশা জামিয়া আসে, এগারটা বারটা পৰ্য্যন্ত বিমানোর আরাম ভোগ করিযী। সে ঘুমাইয়া পড়ে। আজ সে সুখটা ফস্কাইয়া গিয়াছে। রাত ন’টা পৰ্য্যন্ত বাহিরে বাহিরে ঘুরিয়া এমন শ্ৰান্তই সে হইয়া পড়িয়াছিল যে ভাল করিয়া নেশা জমিবার আগেই ঘুম আসিয়া গিয়াছে। নরেন চিৎ হইয়া শুইয়া তৃতীয়বার লটারীর টিকিটের লেখাগুলি খুটিয়া খুটিয়া পড়িতেছে। বিমলাও পড়ার টেবিল ছাড়িয়া কয়েকখানা বই আর খাতা-পেন্সিল লইয়া বিছানায় আশ্রয় গ্ৰহণ করিয়াছে। মুখে তার গভীর দুশ্চিন্তার ছাপ। কিছুক্ষণ হইতে সে মনে মনে একটা গল্প গড়িয়া তুলিতেছিল। ‘কলেজ হইতে সবিতার গাড়ীতে মোড় পৰ্য্যন্ত আসিবার সময় একটা অ্যাকসিডেণ্ট ঘটিয়া গিয়াছে, হাসপাতালে সে আর সবিতা একটা ঘরে পাশাপাশি দু'টি - বেডে পড়িয়া আছে। (O