পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ বিশ্বাস তাতে বাড়িয়াই গিয়াছে। সে শুধু বুঝিতে পারে না, বিলকুল জমা করার জন্য লোকটার এত টাকার খাকতি কেন । আগে খুব কষ্ট পাইয়াছে।--বীে-এর মাথা একটু খারাপ হইয়া যাওয়ার মত কষ্ট, বিনা চিকিৎসায় ছেলে মরিয়া যাওয়ার মত কষ্ট। চিরদিনের মত তার দেহ ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। পালোয়ানের খোরাক দরকার ছিল, অজীর্ণ রুগীর পথ্য জুটিত না। শুধু জল খাইয়া দিনের পর দিন তার জলখাবারের প্রয়োজন মিটিত । বলিতে বলিতে শুষ্ঠামলাল দাতে দাতে ঘষিতে থাকে। হঠাৎ হাত বাড়াইয়া বলে, ‘আয় পাঞ্জ৷” ফেলনার লোহার মত আঙ্গুলগুলি সরু সরু আঙ্গুলে চাপিয়া ধরিয়া বলে, ‘গায়ের জোরের বড়াই করিস, ডাম্বেল মুগুর ভেজে শরীরটা যা করেছিলাম দেখিস নি তো । তোকে তুলে ছুড়ে ফেলে দিতে পারতাম তখন ।” এসব ফেলনা বুঝিতে পারে না। অতীতের দুঃখ দুৰ্দশার জন্য এখন ফোস ফোস করা কেন ? ফুটপাতে ফেলনার কত রাত কাটিয়াছে, ছো মারিয়া খাবারের দোকান হইতে খাবার তুলিয়া ছুটিয়া পলাইয়া পেট ভরার ব্যবস্থা করিতে হইয়াছে, সে তো এসব কথা ভাবিয়া কখনো মাথা গরম করে না । খামলাল বলিল, “রাসিকে বলিস গিয়ে, বালাটা শুধু বাধা রেখেছি, আংটিটিা আছে। কাল পরশু পাঠিয়ে দেব।” “আমায় দুস্তান না ?” “তোকে দেবার জন্য আংটি পকেটে নিয়ে বেড়াচ্ছি না ?” ফেলনা সকৌতুকে হাসিল। শুষ্ঠােমলালের পকেটেই হয়তো আংটি আছে, তাকে বিশ্বাস করিয়া দিবে না। এ অবিশ্বাস অন্যায় নয়। আংটি হাতে পাইলে ঘরে গিয়া পৌছানোর আগেই সে বেচিয়া দিত। (28