পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V) পরদিন ঘুম ভাঙ্গিবার পর এ রকম লাগে, আজ সন্ধ্যারাত্ৰেই অকারণে সেইরকম লাগিতেছে। শুধু তীব্র ঝাঁঝালো বিরক্তির বদলে এখন কেমন একটা ঘুমধর আবেশ আসিয়াছে, চুপচাপ শুইয়া নানা কথা ভাবিতে ভাল লাগিতেছে। রক্তশোষা লোভের সঙ্গে শ্যামলালের দারদের কথা, হৃদয়হীন স্বার্থপরতার সঙ্গে রাসির উদারতার কথা, আর তার মুক্তিতে সকলের খুসী হওয়ার কথা। চা আনিয়া দিয়া পাসি বলিল, “দুধ একটুকুন কম হল। এক পয়সা দ্ৰ দুধ দিইছে এ্যাত্তোটুকুন, সেবারে চা বানাতেই প্ৰায় শেষ।” রাসি একটু বসে। ফেলনা যেন কেমন ভাবে তাকে দেখিতেছে। সাদা চোখে এমনভাবে তাকায় কেন ? চোখ কিন্তু ফেলনার একটি লাল মনে হইতেছে। ব্যাপারটা রাসি ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারে না। অনেকদিন আগে সাদা চোখেই যখন তখন ফেলনা এমনিভাবে তার দিকে তাকাইয়া থাকিত, শরীরে কেমন একটা শিহরণ বহিয়া গিয়া আপন হইতে মুখে হাসি ফুটিয়া উঠিত। আজ হাসিটা দেখা দিতেছিল, পরবত্তী অভ্যাসে সেটা রাসি চাপিয়া গেল। রাসির কপালে একটা কাটা দাগ আছে! একদিন ফেলনা তাকে ঠেলিয়া দিয়াছিল, কপালটা ঠকিযা গিয়াছিল জানালার পাটে। রাসি তার চেয়েও বেঁটে, পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়া উচু হইয়া দাড়াইয়া তবে জানাল দিয়া রাস্তা দেখিতে পায়। খুব নামাইয়া পাতা কাটলেও রাসির কপালের দাগটা ঢাকা পড়ে না, তবু এতকাল একবারও দাগটা ফেলনার চোখে পড়ে নাই। রাসির ফ্যাকাসে মুখে দাগটা ফেলনার চোখে বড়ই বেমানান ঠেকিতেছিল। বালার অভাবে রাসির হাত শুঠিও কঁকা ফাক লাগিতেছে। GS