পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ এতক্ষণে রাণীর মনে পড়িল, কাল রাত্রে এ ঘরের বালাবটি ফিউজ হইয়া গিয়াছিল। আজ আপিস ফেরৎ মাধববাবু বালব কিনিয়া আনিয়া লাগাইবেন। “অন্ধকারে বসে আছেন ?” “আলো না জালালে কি করব বল ?” আলো না জালিবার কারণটি ব্যাখ্যা করিয়া রাণী বলিল, “মোমবাতি আনিয়ে নেব একটা ?” “কি দরকার ? তার চেয়ে চল ঘুরে আসি।” দুজনে বাহির হইয়া গেল। বিকাশের মোটরটি খুব বড় নয়, আনকোরা নতুনও নয়। দামী গাড়ী কিনিবার পয়সা বিকাশের আছে, কিন্তু ওভাবে পয়সা নষ্ট করিবার সখ তার নাই। মানুষটা সে একটু হিসাবী, গাড়ীর চাকচিক্যে মানুষের মনে ঈর্ষামেশানো সন্ত্রম জাগাইয়া সুখী হওয়ার মত বোকামিকে সে প্রশ্ৰয় দেয় না। এইজন্য রাণী তাকে বড় ভয় করে। কোন তুচ্ছ থুতটি কত বড় হইয়া বিকাশের চোখে ঠেকিবে, কে তা জানে ? চল্লিশ বছর বয়সে মানুষ জীবনসঙ্গিনীর মধ্যে কি চায় ? অহঙ্কার চায় না, ধৈৰ্যহীনতা চায় না, চাপল্য চায় না, সঙ্কীর্ণত চায় না- এসব রাণী জানে। কিন্তু কি চায় ? বাঝাহীন স্নিগ্ধ খানিকটা রূপযৌবন আর শান্ত-কোমল স্বভাব ? ভক্তি ? শ্ৰদ্ধা ? যাই হোক, চোখ দুটি ছাড়া তার মধ্যে আর কিছু যে বিকাশের ভাল লাগিয়াছে আজ পর্যন্ত কথায় বা ইঙ্গিতে কোনদিন সে প্ৰকাশ করে নাই। ধরা যাক, তাকেই যদি বিকাশ জীবনসঙ্গিনী করে, তবে কি বলিতে হইবে চল্লিশ বছর বয়সে বিকাশের মত মানুষ জীবনসঙ্গিনীর মধ্যে মনের মত দুটি চোখ ছাড়া আর কিছুই চায় না ? صوb\