কাজল এইবার হঠাৎ রাণীর মনে পড়িয়া গেল, চোখে আজ কাজলের ছোয়াচ দেওয়া হয় নাই। গাড়ী তখন বড় রাস্তার কাছাকাছি আসিয়া পড়িয়াছে, সঙ্কীর্ণ পথে খুব সাবধানে গাড়ী চালাইতে হইতেছে বলিয়া বিকাশ চুপ করিয়া আছে, বড় রাস্তায় পড়িলে কথা আরম্ভ করিবে। রাণীর সমস্ত শরীর যেন অবশ হইয়া আসে, মাথাটা ঝিম ঝিম করিয়া ওঠে ! আর কতক্ষণ ? পনের মিনিট, কুড়ি মিনিট । তারপরেই নিমন্ত্রণ-বাড়ীর জোরালো আলোতে রাণীর এতদিনের সমস্ত আশার সমাধি। বিকাশ অবাক হইয়া খানিকক্ষণ তার গোল, ফ্যাকাসে আর ছোট ছোট চোখ দুটির দিকে চাহিয়া থাকিবে । তারপর আত্মসম্বরণ করিয়া চিরদিন যেভাবে কথা বলিয়াছে, যেরকম ব্যবহার করিয়াছে, তেমনিভাবে কথা বলিবে, সেইরকম ব্যবহার করিবে। যেন কিছুই ঘটে নাই । সথাসময়ে বাড়ীও পৌছাইয়া দিয়া আসিবে তাকে। তারপর ধীরে ধীরে যাতায়াত কমিতে কমিতে তাদের বাড়ীতে বিকাশের পদাৰ্পণ ঘটবে কদাচিৎ-তাদের দুজনের মধ্যে বজায় থাকিবে সাধারণ একটা বন্ধুত্ব । হয়তো তাও থাকিবে না । “কি ভাবিছ ?” “কিছু না।” রাণীর গলার আওয়াজ শুনিয়া বিকাশ চকিতে একবার তার মুখের দিকে তাকায়। কিছু বলে না। এরকম একটা সম্ভাবনার কথা কি রাণী কখনো ভাবে নাই ? সে ভাবনার সঙ্গে আজ সত্য সত্যই ব্যাপারটা ঘটিয়া যাওয়ার মধ্যে কত তফাৎ। নিজেই সে ছোট বিছানাটিতে শুইয়া কতদিন কল্পনা করিয়াছে, চোখে কাজল না দিয়াই বিকাশের সামনে একদিন বাহির হইবে, ডাকিয়া বলিবে, দ্যাখে তো কাজল না দিলে কেমন দেখায় আমার VGS)
পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৭
অবয়ব