পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আততায়ী আগুনের বন্ধুটি সেদিন অনেক আগে হইতেই আধ-শুকনো পাতাঝরানোর মত জোরালো অস্তিত্ব নিয়া উপস্থিত ছিল। বাতাসের জন্যই উত্তরে ছোট ডোবার ওপাশের বাড়ীগুলি বাচিয়া গেল, কিন্তু দক্ষিণে অতবড় পুকুর ডিঙ্গাইয়া আগুন ধরিয়া উঠিল দিবাকর ও তাদের প্ৰতিবেশীর বাড়ী চালায় । তারপর লাফাইয়া লাফাইয়া আগাইয়া চলিতে লাগিল এক চালা হইতে আরেক চালায়। দিবাকর ও কৃত্তিবাসের মনের আগুন নিভিয়া গিয়াছিল গোড়ার দিকেই, চারিদিকে ছুটাছুটি হৈ চৈ ও আর্তনাদের মধ্যে ভয়ে বিস্ময়ে নির্বাক ও নিম্পন্দ হইয়া দু'জনে দাড়াইয়া রহিল পুকুরে পূর্ব দিকে একটা জাম গাছের নীচে এবং আগুনের সেই ব্যাপক ও বিরাট মনোহর রূপ দেখিয়া মাঝে মাঝে একেবারে মুগ্ধ হইয়া যাইতে লাগিল। উনান হইতে আগুন সংগ্রহের সময় কৃত্তিবাসের মাসী রান্না করিতেছিল। সেদিনটা সে কোনরকমে চুপ করিয়া রহিল, পরদিন সকালে ধনদাসের কাণে কাণে কথাটা ফাস না করিয়া সে থাকিতে পারিল না। তখনও ভিটায় ভিটায় স্তুপাকার ছাই ও কয়লার মধ্যে শিখাহীন আগুন গুমরাইয়া গুমরাইয়া জলিতেছে। মোটা একটা জ্বলন্ত বঁাশ তুলিয়া ধনদাস পাগলের মত ছেলের মুখে বুকে পিঠে যেখানে পারিল চাপিয়া ধরিতে লাগিল । দিবাকর তখন সেখানে ছিল না । একটা গাছতলায় ছড়ানো জিনিষপত্রের মধ্যে বসিয়া সে তখন ধীরে সুস্থে মুড়ি চিবাইতেছিল। দিবাকরের বাবা নিবারণ খুব সাবধানী ও হিসাবী মানুষ, ধনদাসের রান্নাঘরের চালাটা জলিয়া উঠিয়াছে দেখিয়াই সে তাড়াতাড়ি ঘরের জিনিষ বাহির করিতে আরম্ভ করিয়া দিয়াছিল। তবে একথাও সত্য যে, নিবারণ ধনদাসের মত বড়লোক নয় । ԳS