পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
সমূহ।

লাভবান হইয়াছে তাহারাও যে আমাদের বিরুদ্ধ হইয়াছে এমন প্রমাণও আছে। ইহার কারণ, আমরা ইহাদিগকে কাজে প্রবৃত্ত করিবার চেষ্টার পূর্বে এবং সঙ্গে সঙ্গে ইহাদের মন পাই নাই—মন পাইবার প্রকৃত পন্থা অবলম্বন করি নাই—আমাদের প্রতি ইহাদের অবিশ্বাস ও দূরত্ব দূর করি নাই। আমরা ইহাদিগকে নিজের মতে চালাইবার এবং কাজে লাগাইবারই চেষ্টা করিয়াছি কিন্তু ইহাদিগকে কাছে টানি নাই। সেই জন্য সহসা একদিন ইহাদের সুপ্তপ্রায় ঘরের কাছে আসিয়া ইহাদিগকে নাড়া দিতে গিয়া ইহাদের সন্দেহকে, বিবােধকেই জাগাইয়া তুলিয়াছি। ইহাদিগকে আত্মীয় করিয়া না তুলিয়াই ইহাদের নিকট হইতে আত্মীয়তা দাবী করিয়াছি। এবং যে উৎপাত আপন লােক কোনােমতে সহ্য করিতে পারে সেই উৎপাতের দ্বারা ইহাদিগকে পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণ দূরে ফেলিয়াছি।

 এবার এতকাল পরে আমাদের বক্তারা ইংরেজি সভার উচ্চমঞ্চ ছাড়িয়া দেশের সাধারণ লােকের দ্বারে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। দেশের লােকের মনে একটা প্রশ্ন উদয় হইল—এ কি ব্যাপার, হঠাৎ আমাদে জন্য বাবুদের এত মাথাব্যথা হইল কেন?

 বস্তুতই তাহাদের জন্য আমাদের মাথাব্যথা পূৰ্বেও অত্যন্ত বেশি ছিল, এখনাে একমুহূর্তে অত্যন্ত বেশি হইয়া উঠে নাই। আমরা এই কথা মনে লইয়া তাহাদের কাছে যাই নাই যে “দেশী কাপড় পরিলে তােমাদের মঙ্গল হইবে এই জন্যই আমাদের দিনে আহার নাই এবং রাত্রে নিদ্রার অবকাশ ঘটিতেছে না।” আমরা এই বলিয়াই গিয়াছিলাম যে, “ইংবেজকে জব্দ করিতে চাই কিন্তু তােমরা আমাদের সঙ্গে যােগ না দিলে বয়কট সম্পূর্ণ হইবে না অতএব ক্ষতি স্বীকার করিয়াও তােমাদিগকে দেশী কাপড় পরিতে হইবে।”

 কখনাে যাহাদের মঙ্গল চিন্তা ও মঙ্গল চেষ্টা করি নাই, যাহাদিগকে আপনলােক বলিয়া কখনাে কাছে টানি নাই, যাহাদিগকে বরাবর অশ্রদ্ধাই