পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

“স্বদেশী সমাজ” প্রবন্ধের পরিশিষ্ট।

 কর্ণ যখন তাহার সহজ কবচটি ত্যাগ করিয়াছিলেন, তখনি তাহার মৃত্যু ঘনাইয়াছিল, অর্জ্জুন যখন তাহার গাণ্ডীব তুলিতে পারেন নাই, তখনি তিনি সামান্য দস্যুর হাতে পরাস্ত হইয়াছিলেন। ইহা হইতে বুঝা যাইবে, শক্তি সকলের এক জায়গায় নাই—কোনাে দেশ নিজের অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে নিজের‌ বল রক্ষা করে, কোনাে দেশ নিজের সর্ব্বাঙ্গে শক্তিকবচ ধারণ করিয়া জয়ী হয়।

 য়ুরােপের যেখানে বল, আমাদের সেখানে বল নহে। য়ুরােপ আত্মরক্ষার জন্য যেখানে উদ্যম প্রয়ােগ করে, আমাদের আত্মবক্ষার জন্য সেখানে উদ্যমপ্রয়ােগ বৃথা। য়ুরোপের শক্তির ভাণ্ডার ষ্টেট্‌ অর্থাৎ সরকার। সেই ষ্টেট্‌ দেশের সমস্ত হিতকর কর্মের ভার গ্রহণ করিয়াছে-ষ্টেটই ভিক্ষাদান করে, ষ্টেট্ই বিদ্যাদান করে, ধর্ম্মরক্ষার ভারও ষ্টেটের উপর। অতএব এই ষ্টেটের শাসনকে সর্বপ্রকারে সবল, কর্মিষ্ঠ ও সচেতন করিয়া রাখা, ইহাকে আভ্যন্তরিক বিকলতা ও বাহিরের আক্রমণ হইতে বাঁচানোই য়ুরােপীয় সভ্যতার প্রাণরক্ষার উপায়।

 আমাদের দেশে কল্যাণশক্তি সমাজের মধ্যে। তাহা ধর্ম্মরূপে আমাদের সমাজের সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত হইয়া আছে। সেইজন্যই এতকাল ধর্ম্মকে, সমাজকে বাঁচানােই ভারতবর্ষ একমাত্র আত্মরক্ষার উপায় বলিয়া জানিয়া আসিয়াছে। রাজত্বের দিকে তাকায় নাই, সমাজের দিকেই দৃষ্টি রাখিয়াছে। এইজন্য সমাজের স্বাধীনতাই যথার্থভাবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা। কারণ, মঙ্গল করিবার স্বাধীনতাই স্বাধীনতা, ধর্ম্মরক্ষার স্বাধীনতাই স্বাধীনতা।