পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
সমূহ।

যে সময়ে বীর্য্যের স্থান বাণিজ্য অধিকার করিয়াছে এবং ধর্ম্মের স্থান অধিকার করিয়াছে স্বাদেশিকতা—ইহা সেই সময়কার রাষ্ট্রনীতি।

 কিন্তু এই সময়কে আমরাও দুঃসময় বলিব কি না বলিব, তাহা সম্পূর্ণ আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর করিতেছে। সত্যের পরিচয় দুঃখের দিনেই ভাল করিয়া ঘটে, এই সত্যের পরিচয় ব্যতীত কোনো জাতির কোনোকালে উদ্ধার নাই। যাহা নিজে করিতে হয়, তাহা দরখাস্ত দ্বারা হয় না; যাহার জন্য স্বার্থত্যাগ করা আবশ্যক, তাহার জন্য বাক্যব্যয় করিলে কোনো ফল নাই; এই সব কথা ভাল করিয়া বুঝাইবার জন্যই বিধাতা দুঃখ দিয়া থাকেন। যতদিন ইহা না বুঝিব, ততদিন দুঃখ হইতে দুঃখে, অপমান হইতে অপমানে বারংবার অভিহত হইতেই হইবে।

 প্রথমত এই কথা আমাদিগকে ভাল করিয়া বুঝিতে হইবে কর্তৃপক্ষ যদি কোন আশঙ্কা মনে রাখিয়া আমাদেব মধ্যে ঐক্যের পথগুলিকে যথাসম্ভব রোধ করিতে উদ্যত হইয়া থাকেন, সে আশঙ্কা কিরূপ প্রতিবাদের দ্বারা আমরা দূর করিতে পারি, সভাস্থলে কি এমন বাক্যের ইন্দ্রজাল আমরা সৃষ্টি করিব—যাহার দ্বারা তাহারা এক মুহূর্ত্তে আশ্বস্ত হইবেন? আমরা কি এমন কথা বলিতে পারি যে, ইংরেজ অনন্তকাল আমাদিগকে শাসনাধীনে রাখিবেন, ইহাই আমাদের একমাত্র শ্রেয়? যদি বা বলি, তবে ইংরেজ কি অপোগণ্ড অর্ব্বাচীন যে এমন কথায় মুহূর্ত্তকালের জন্য শ্রদ্ধাস্থাপন করিতে পারিবে? আমাদিগকে এ কথা বলিতেই হইবে এবং না বলিলেও ইহা সুস্পষ্ট যে, যে পর্য্যন্ত না আমাদের নানাজাতির মধ্যে ঐক্যসাধনের শক্তি যথার্থভাবে, স্থায়িভাবে উদ্ভূত হয়, সে পর্য্যন্ত ইংরেজের রাজত্ব আমাদের পক্ষে প্রয়োজনীয়; কিন্তু পরদিনেই আর নহে।

 এমন স্থলে ইংরেজ যদি মমতায় মুগ্ধ হইয়া, যদি ইংরেজি জাতীয় স্বার্থের দিকে তাকাইয়া—সেই স্বার্থকে যত বড় নামই দাও না কেন,