পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাবনা প্রাদেশিক সম্মিলনী।
৭৯

যেখানে সীমা সেখানে পৌঁছিয়া তাঁহারা যেদিন দেখিবেন বাহিরের ক্ষুদ্র গানে অন্তরের গভীর দৈন্য কিছুতেই ভরিয়া উঠে না, যখন বুঝিবেন শক্তিলাভ ব্যতীত লাভ নাই এবং ঐক্য ব্যতীত সে লাভ অসম্ভব, যখন জানিবেন, যে একদেশে আমরা জন্মিয়াছি সেই দেশের ঐক্যকে খণ্ডিত করিতে থাকিলে ধর্ম্মহানি হয় এবং ধর্ম্মহানি হইলে কখনই স্বার্থরক্ষা হইতে পারে না তখনই আমরা উভয় ভ্রাতার একই সমচেষ্টার মিলনক্ষেত্রে আসিয়া হাত ধরিয়া দাঁড়াইব।

 যাই হৌক্, হিন্দু ও মুসলমান, ভারতবর্ষের এই দুই প্রধান ভাগকে এক রাষ্ট্রসম্মিলনের মধ্যে বাঁধিবার জন্য যে ত্যাগ, যে সহিষ্ণুতা, যে সতর্কতা ও আত্মদমন আবশ্যক তাহা আমাদিগকে অবলম্বন করিতে হইবে। —এই প্রকাণ্ড কর্ম্মঋণই যখন আমাদের পক্ষে যথেষ্ট তখন দোহাই সুবুদ্ধির, দোহাই ধর্ম্মের, প্রাণধর্ম্মের নিয়মে দেশের যে নুতন নুতন দল উঠিবে তাহারা প্রত্যেকেই এক একটি বিরোধরূপে উঠিয়া যেন দেশকে বহুভাগে বিদীর্ণ করিতে না থাকে; তাহারা যেন একই তরুকাণ্ডের উপর নব নব সতেজ শাখার মত উঠিয়া দেশের রাষ্ট্রীয় চিত্তকে পরিণতিদান করিতে থাকে।

 পুরাতন দলের ভিতর দিয়া দেশে যখন একটা নূতন দলের উদ্ভব হয় তখন তাহাকে প্রথমটা অনাহুত বলিয়া ভ্রম হয়। কার্যকারণ-পরম্পরার মধ্যে তাহার যে একটা অনিবার্য স্থান আছে অপরিচয়ের বিরক্তিতে তাহা আমরা হঠাৎ বুঝিতে পারি না। এই কারণে নিজের স্বত্ব প্রমাণের চেষ্টায় নুতন দলের প্রথম অবস্থায় স্বাভাবিকতার শান্তি থাকে না সেই অবস্থায় আত্মীয় হইলেও তাহাকে বিরুদ্ধ মনে হয়।

 কিন্তু এ কথা নিশ্চিত সত্য যে, দেশে নুতন দল, বীজ বিদীর্ণ করিয়া অঙ্কুরের মত, বাধা ভেদ করিয়া স্বভাবের নিয়মেই দেখা দেয়। পুরাতনের সঙ্গেই এবং চতুর্দ্দিকের সঙ্গে তাহার অন্তরের সম্বন্ধ আছে।