বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সরল কৃত্তিবাস – যোগীন্দ্রনাথ বসু (১৯০৮).pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৮
সরল কৃত্তিবাস

আমি জানি সীতার শরীরে নাহি পাপ।
বিধির নির্ব্বন্ধ এই, ঘটিল সন্তাপ॥
আর কিছু, মহামুনি, না বলিহ মোরে।
সীতার পরীক্ষা ল’ব সভার ভিতরে॥
শ্রীরাম বলেন, সীতা, শুনহ বচন।
দেখ, ত্রিলোকের হেথা আইল সর্ব্বজন ॥
প্রথম পরীক্ষা দিলে সাগরের পার।
দেবগণ জানে তাহা, না জানে সংসার॥
পুনশ্চ পরীক্ষা দিবে সবাকার আগে।
দেখিয়া লোকের যেন চমৎকার লাগে॥
এত যদি বলিলেন শ্রীরাম সীতারে।
যোড়হাতে জানকী বলেন ধীরে, ধীরে॥
পরীক্ষা দিলাম পূর্ব্বে দেব-বিদ্যমানে।
দেবেরা বলিল যাহা, শুনিলে আপনে॥
সর্ব্বগুণ ধর তুমি, বিচারে পণ্ডিত।
বুঝিয়া পরীক্ষা নিতে হয়ত উচিত।
না দিব পরীক্ষা, প্রভু, ঘুচাব জঞ্জাল!
সংসারের সাধ নাহি, যাইব পাতাল॥
আজি হৈতে ঘুচুক তোমার লাজ, দুঃখ।
আর যেন নাহি দেখ জানকীর মুখ |
নিরবধি অপবাদ দিতেছ আমারে।
সভায় পরীক্ষা দিতে কহু বারে, বারে॥
জন্মে, জন্মে, প্রভু, মোর হ’য়ো তুমি পতি।
আর কোন জন্মে হেন ক’রোনা দুর্গতি॥
ইহা কহিলেন সীতা সভা-বিদ্যমানে।
মেলানি মাগিলা নিজ প্রভুর চরণে॥
সীতার বচন যে শুনিল সর্ব্বলোকে।
লজ্জায় কাতরা সীতা পৃথিবীকে ডাকে॥
মা হইয়া, পৃথিবি, মায়ের কর কাজ।
এ বিয়ের লাজ হৈলে তোমার যে লাজ।
উদরে ধরিলে মোরে, তা’কি মনে নাই॥
তোমার চরণে সীতা মাগে কিছু ঠাঁই॥

করিলেন সীতা পৃথিবীকে হেন স্তুতি।
সপ্ত পাতালেতে থাকি শুনে বসুমতী॥
সীতা নিতে পৃথিবী করিল আগুসার।
ভেদি সপ্ত পাতাল হইল এক দ্বার॥
অকস্মাৎ উঠিল সুবর্ণ সিংহাসন।
দশদিক আলো করে তাহার কিরণ॥
নানাবিধ বসন, ভূষণ পরিধান।
মূর্ত্তিমতী পৃথিবী আইল বিদ্যমান॥
ঝি বলিয়া পৃথিবী সীতারে ডাকে ঘনে।
কোলে করি সীতারে তুলিল সিংহাসনে॥
সবে দেখে, কারো নেত্রে না পড়ে নিমেষ।
সীতাদেবী করিলেন পাতাল প্রবেশ॥
লব, কুশ দেখিয়া হাতের ফেলে বীণা।
ভূমে লোটাইয়া কান্দে ভাই দুই জনা॥
কোথা গেলে, জননি গো, জনক-দুহিতে।
আমরা তোমার শোক না পারি সহিতে॥
তোমা বিনা, মাতাগো, অন্যকে নাহি জানি।
তুমি বিনা আর কেবা দিবে অন্ন, পানী॥
পাইয়া নিস্তার দুঃখে গেলে, মা, পাতালে।
অনাথ করিয়া গেলে এ দুই ছাওয়ালে॥
এত বলি কান্দে দোঁহে লোটাইয়া ধূলি।
ধূলায় ধূসর অঙ্গ, ননীর পুতলি॥
পুত্ত্রের ক্রন্দনে রাম হইয়া কাতর।
অন্তঃপুরে পাঠা’লেন মায়ের গোচর॥
কৌশল্যা, কৈকেয়ী আর সুমিত্রা এতিনে।
যতেক প্রবোধ দেন, প্রবোধ না মানে॥
দু’ভায়ের নেত্রজলে তিতিল মেদিনী।
প্রবোধ করিতে নারে কোন ঠাকুরাণী ॥
অশ্রুজলে শ্রীরামের বুক ভেসে যায়।
কোন রূপে অশ্বমেধ সমাপেন, হায়॥:
সংসার দেখেন শূন্য সীতার বিহনে।
নেত্রনীর শ্রীরামের বহে রাত্রি, দিনে॥