বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সরল কৃত্তিবাস – যোগীন্দ্রনাথ বসু (১৯০৮).pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উত্তরাকাণ্ড।
২১৯

পাত্র, মিত্র, মাতা যে বিমাতা, ভ্রাতৃগণ।
বিবাহ করিতে রামে বুঝনি তখন॥
বিবাহে বিমুখ কিন্তু শ্রীরাণের নন।
সীতা, সীতা বলি সদা করেন রোদন॥
স্বর্ণ সীতা পানে রাম এক দৃষ্টে চান।
উত্তর না পেয়ে তাঁর আরো দুঃখ পান॥
শুকা’ল কমল মুখ, শ্রীঅঙ্গ মলিন।
সীতার চিন্তায় রাম দিনে, দিনে ক্ষীণ॥
তথাপি পালেন রাজ্য ধর্ম্ম অনুসারে।
সবে বলে, রামরাজ্য অতুল সংসারে॥
চারিভারের অষ্ট পুত্র লইল জনম।
পিতৃরূপ পাইল সবে, পিতার বিক্রম॥
অষ্ট জনে অষ্ট রাজ্য দিলেন শ্রীরাম
লব, কুশ পাইল অযোধ্যা, নন্দীগ্রাম॥
কৌশল্যা, কৈকেয়ী আদি মহারাণী যত।
কাল বশে, ক্রমে, সবে হৈলা স্বর্গগত॥
লীলা শেষ হৈল, মর্ত্তে নাহি প্রয়োজন।
পৃথিবী ত্যজিতে হৈল শ্রীরামের মন॥

অযোধ্যায় কালপুরুষের আগমন, লক্ষ্মণ-বর্জ্জন,
এবং শ্রীরামচন্দ্র প্রভৃতির স্বর্গারোহণ।

পরে কালপুরুষ সে সংসারবিনাশী।
অযোধ্যায় প্রবেশিল হইয়া সন্ন্যাসী॥
পাইয়া রামের আজ্ঞা লক্ষ্মণ সত্বর।
কালপুরুষেরে নিল রামের গোচর॥
পাদ্য, অর্ঘ্য দিয়া রাম দিলেন আসন।
যোড়হস্তে জিজ্ঞাসেন, কিবা প্রয়োজন॥
সে কালপুরুষ বলে, শুনহ বচন।
যে কথা কহিব, পাছে শুনে অন্য জন॥
এ সময়ে যে করিবে হেথা আগমন।
ব্রহ্মার বচনে তারে করিবে বর্জ্জন॥

শ্রীরাম বলেন, শুন, প্রাণের লক্ষ্মণ।
সাবধানে থাক, না আইসে কোন জন ॥
অধিক কি ক’ব, “যেবা দ্বার পানে চায়।
তাহাকে ত্যজিব আমি, জানিহ নিশ্চয়॥
বিধাতার নির্ব্বন্ধ যে না যায় খণ্ডন।
কালপুরুষের সঙ্গে হয় সম্ভাষণ॥
সে কালপুরুষ বলে পরিচয় করি।
মর্ত্ত্যেতে রহিলে, শূন্য বৈকুণ্ঠনগরী॥
ব্রহ্মার বচন, রাম, কর অবধান।
সংসার ছাড়িয়া তুমি চল নিজ স্থান ॥
শ্রীরাম বলেন, যম, যে কহ এখন।
সংসার ছাড়িয়া আমি করিব গমন॥
দৈবের নির্ব্বন্ধ আছে, না যায় খণ্ডন।
হেনকালে হৈল দুর্ব্বাসার আগমন॥
রামের আদেশে দ্বারে আছেন লক্ষ্মণ।
মুনি বলে, গিয়া করি রাম-সম্ভাষণ॥
লক্ষ্মণ বলেন, মুনি, ক্ষম দাস ব’লে।
শ্রীরাম দূতের সনে আছেন বিরলে॥
যে কর্ম্ম সাধিবে করি রাম-সম্ভাষণ।
আজ্ঞা কর, সাধি আমি সেই প্রয়োজন॥
কুপিল দুর্ব্বাসা মুনি লক্ষ্মণের প্রতি।
লক্ষাণের পানে চাহি কহে কোপমতি॥
লক্ষাণ, আমার শাপে কার বাপে তরি।
শাপ দিয়া পোড়াইব অযোধ্যানগরী॥
বালক, বনিতা, বৃদ্ধ করি আজি ধ্বংস।
দশরথ ভূপতিরে করিব নির্ব্বংশ॥
দেখিয়া মুনির কোপ লক্ষাণের ত্রাস।
ভাবেন, বুঝিয়া আজি হয় সর্ব্বনাশ॥
আমারে বর্জ্জিলে আমি মরি এক জন।
পিতৃবংশ নাশ করি কিসের কারণ॥
এত ভাবি যথা হয় কথোপকথন।
মুনিকে লইয়া তথা গেলেন লক্ষাণ॥