পাতা:সরস গল্প - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তপুরুষ হরিদাস র্তাহারা আপনাকে ও বহুরূপী জগৎকে ব্ৰহ্মরূপেই দর্শন করেন।” হরিদাসবাবুর দেহ রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিল । তঁহার মনে হইল, জ্ঞান তঁাহার হইয়া গিয়াছে। সব সংস্কারের একটি সংস্কারও তাহার নাই। ব্ৰহ্ম ও তিনি যে এক, এ জ্ঞান তাহার মৰ্মে মর্মে ঢুকিয়াছে। কি ভয়ানক কথা ! এত সহজে সংসারের জ্বালাযন্ত্রণার হাত এড়ানো যায়, কেহ এতদিন তাহাকে বলে নাই কেন ? পুনরায়-“মুক্ত-পুরুষসহ উপযুক্ত অবলম্বন করিয়া উত্তমপুরুষ ব্ৰহ্মে চিরপ্রতিষ্ঠিত হয়েনা।” সাধন তো তাহার হইয়া গিয়াছে। তিনি সব বুঝিতে পারিয়াছেন। সাধন না হইলে দিব্যজ্ঞান হয় ? দিব্য জ্ঞান তঁাহার হইয়া গিয়াছে অথবা যদি বাকি থাকে, সামান্যই বাকি । “তদবস্থায় গুণাতীত আশ্ৰয়রূপী ব্ৰহ্ম তাহাদের নিকট স্বতঃই প্ৰকাশিত হয়েন এবং তঁাহারা ব্ৰহ্মস্বরূপতা প্ৰাপ্ত হয়েন ।” উঃ, ও সব কথা এতদিন কোথায় ছিল ! পুনরায়-“সময় না হইলে তত্ত্বসমূহ জীবের নিকট প্ৰকাশ করা হয় না। যে উপযুক্ত পােত্র, মহাপুরুষবাক্যের সম্পূর্ণ অনুকুল, শুধু তঁহারই নিকট গভীর শাস্ত্রতত্ত্বসমূহ উপস্থাপিত হইয়া থাকে ৷” ধন্য মহেশ্বরানন্দ গিরি : ধন্য শ্ৰীপতি কুণ্ডু ! আজ সময় হইয়াছে বলিয়াই তাহা হইলে এ তত্ত্ব র্তাহার চোখের সামনে ভগবান মেলিয়া ধরিয়াছেন । দিন-কুড়ি কোথা দিয়া কাটিয়া গেল, হরিদাসবাবু বুঝতে পারিলেন না। আগের সে হরিদাসবাবু একেবারেই নাই। যে ব্যক্তি আত্মতত্ত্ব উপলব্ধি করে সে কি আর সাধারণ মানুষ থাকে । হরিদাসবাবুর সাহস বাড়িয়া গিয়াছে, আগের মত ভীরু তিনি আর নাই, টিউশনির ছাত্রের পিতাকে আর তত গ্ৰাহ্য করিবার আবশ্যক কি ? s