পাতা:সরস গল্প - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিয়ের অনিদ্র্য যখন আসে তখন সে তো আর একা এক চুপি চুপি আসে না। এমন করিয়া অঘটন ঘটিলে সে কি করিয়া বঁচিবে ? আজ সে যে শোক পাইয়াছে তাহার কাছে তাহার মৃত্যুজনিত শোক সম্পূর্ণ তুচ্ছ। স্ত্রর শোক সে ভুলিতে পারে ; কিন্তু এ শোক তো সে কখনও কোন কালে ভুলিতে পারিবে না! গত ছয় দিন ছয় রাত্রি এই দারুণ উদ্বেগে কাটিয়াছে, যতটা স্ত্রীর বিরহে না হউক, তাহাব বেশি। ওই বৎসরে এক শ’ কুড়ি টাকা খরচের ভয়ে। সেই ভয়েই তাহার ছয় দিন ছয় রাত্রি ঘুম হয় নাই। বকুল ছিল সংসারে নিতান্ত প্ৰয়োজনীয়। তাহার মৃত্যুতে সংসার একেবারে বিপর্যন্ত হইয়া গিয়াছে; কি দিয়া অভয় সে সংসারকে সুশৃঙ্খলার মধ্যে আনিবে ? ভাবিয়া ভাবিয়া অভয় আজ ছয় দিন ধরিয়া হদিস পায় নাই। স্ত্রী মানুষের মরে, অভয়ের তাহাতে তত দুঃখ নাই। কিন্তু ঐ যে কথা আছে, ভাগ্যবানের বউ মরে, অভাগার ঘোড়া মরে—তবে স্ত্রীর মৃত্যুর পর অভয় ভাগ্যবান হইল কই ? স্ত্রীর মৃত্যুতে তাহার আদৌ দুঃখ নাই। সে তাহার স্ত্রর গহনার বাক্সটি আবার ফর্দ মিলাইয়া দেখিল। না, সে জিনিসটি নাই। অভয়ের চোখ দিয়া হু হু করিয়া জল পড়িতে লাগিল। মানুষ মানুষকে কি এমন করিয়াই ফাকি দেয় ? লোকসানের পর এমন করিয়া লোকসান হইলে সে কি করিয়া সহ্যু করিবে ? না, এই লোকসান সহিয়া সে কখনও সংসারের মধ্যে পড়িয়া থাকিবে না । গহনার বাক্সটির পানে -সে শ্যেনদৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল। স্ত্রীর ব্যবহৃত গহনার সব কিছুই আছে, সব কিছুই সে নিপুণ হস্তে মৃত বকুলের গা হইতে খুলিয়া লইয়াছে। কাশী হইতে তাহার ছোট বােন সেই যে কারুকার্যখচিত কাচের চুড়ি চারাগাছি পাঠাইয়াছিল, সেগুলিও সে সযত্নে তুলিয়া রাখিয়াছে। সক "তুলিয়াছে, কিন্তু ভুল করিয়াছে বকুলের কানের ফুল দুটি খুলিতে See