পাতা:সরস গল্প - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তপুরুষ হরিদাস কি ভাবে তাহা বলি। বড় আশ্চৰ্য ঘটনা । থার্ড ক্লাসের শ্রপতি কুণ্ডু বেঞ্চির তলায় লুকাইয়া কি বই পড়িতেছে হরিদাসবাবু দেখিতে পাইলেন। দু’বার ধারণও করিলেন—এই কি হচ্ছে? অঙ্ক কষো-তাড়াতাড়ি কষো কিন্তু শ্ৰীপতি অঙ্ক কষিবে কেন, ভগবান যে অদ্য তাহাকেই দূতরূপে প্রেরণ করিয়াছেন সংসার ক্লিষ্ট হরিদাসের নিকট। এরূপ অলৌকিক ঘটনা আপনারা মহাপুরুষদের জীবনীর মধ্যে অনেক পাঠ করিয়াছেন, মনে করিয়া দেখুন। শ্ৰীপতি আবার লুকাইয়া সেই বইখানা পড়িতে লাগিল। এবার হরিদাসবাবু চেয়ার হইতে উঠিয়া গিয়া তাহার হাত হইতে ছো। মারিয়া কাড়িয়া লইয়া তাহার কান সজোরে মলিয়া দিলেন। পরে চেয়ারে ফিরিয়া আসিয়া ঋসিলেন। কৌতুহলবশতঃ বইখানা খুলিলেন । আগে ভাবিয়াছিলেন, কোনো নাটক নভেল হইবে-অন্ততঃ ভূতের গল্প; কিন্তু তা নয়, বইখানার নাম ‘বীর-বাণী’, স্বামী বিবেকানন্দ রচিত। হরিদাসবাবু ধর্মের ধার কখনো ধারিতেন না, তবে বিবেকানন্দের নাম ভালই জানিতেন। বইখানা একবার পড়িয়া দেখিবেন বলিয়া হাতে করিয়া রাখিয়া দিলেন । পরদিন রবিবার। টিউশনি ছিল না । বাড়ীতে চা খাইয়া হরিদাসবাবু বইখান। লইয়া বসিলেন । পড়িতে পড়িতে তন্ময় হইয়া গেলেন। এসব কি কথা ! আমিই সেই ! আমিই ভগবান ! অহং ব্ৰহ্মাস্মি । (मांश् । কি মহান, বিরাট আইডিয়া! কি হিমালয়ের মত উদার গগনচুম্বী বাণী ! হরিদাস মাস্টার ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হইতে লাগিলেন। তঁহার মাথা গিয়া মহাব্যোমে ঠেকিল, স্বসংবেদ্য অনুভূতিতে মনপ্ৰাণ ভরিয়া গেল, তিনি আজ আজার, অমর, শাশ্বত আত্মা, ভগবান আর তিনি হাত ধরাধরি করিয়া যুগ-যুগ পার হইয়া চলিয়া আসিয়াছেন, অনন্তকাল ধরিয়া, চলিবেন অনন্তকাল ধরিয়া । তিনি মহাজ্ঞানী, মহাপ্রেমিক, w)