পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ

তেমনি বাঙ্গা,—দীর্ঘ বিরহের অবসানে বুড়া বয়সেও মেয়েমানুষের যতটা আনন্দে ডগমগ হওয়া উচিত তার চেয়ে বোধ হয় বেশী ডগমগ বাঙ্গা!

 ‘পাঁচদিন থাকবে? সত্যি?’

 বলিয়া খুসিতে ছোট মেয়েটি বনিয়া যাওয়া তো আরও সহজ ব্যাপার, আরও কম সময়ের কাজ।

 এবার সপ্তমীর দিনটাও পথ চাহিয়া কাটিয়াছে। বিধুশেখর আসে নাই। অন্য বছর এটা অসাধারণ ঠেকিত না। আজ আসে নাই, কাল আসিবে। কেবল একটা দিনের এই-আসে-এই-আসে-প্রতীক্ষার ব্যর্থতা, পরদিন আরও বেশী অধীরতার সঙ্গে প্রতীক্ষা। কিন্তু এবার ব্যাপারটা আগাগোড়া কেমন যেন খাপছাড়া। কোনবার আসিবার আগে বিধুশেখর পত্র লেখে না, এবার আগেই লিখিয়া জানাইয়াছে, সপ্তমীর দিন আসিয়া পৌঁছিবে। সপ্তমীর দিন না-আসাটা তাই অনন্যসাধারণ ঘটনার পর্য্যায়ে গিয়া পড়িয়াছে।

 করুণা বলিয়াছে, ‘আসবেন লিখে এলেন না—এতো ভারি আশ্চর্য্যি! নয় বৌঠান, আশ্চর্য্যি নয়? দাদার বেলা তো এমন হয় না।’ বাঙ্গা বলিয়াছে, ‘কেন হবে না, হয়। ওঁর কি কথার ঠিক আছে?’ করুণার বৌ ফিসফিস করিয়া বলিয়াছে, ‘কথার ঠিক আছে, মাথার ঠিক নেই। মাথা বেঠিক বলেই না তিরিশ বচ্ছর চুলচিরে কথার ঠিক থেকেছে।’

 ‘কি বল্‌লি?’

 ‘বললাম, কোন কাজে হয় তো আটকে গেছেন কাল আসবেন।’

 ‘আর এসেছে। আসবে লিখেছে যখন, আর কোনদিন আসবে না। জীবনে কোনদিন আসবে না বলে চলে গিয়েছিল কি না, তাই প্রতি বছর এসেছে। এবার আসবে লিখেছে কি না, আর আসবে না।’