সঙ্গে যাইতেই হইবে। গন্তব্য স্থানটা এতদূর আর টুনুর বয়সটা এত কম যে ছ'মাস ধরিয়া টুনুর এই সঙ্গে যাওয়ার কথাটা ভাবিতে গেলেই বাঙ্গার বুক কাঁপিয়াছে, মাথার ঝিমঝিমানি বাড়িয়া গিয়াছে।
আজ এত সব কাণ্ডের ঠিক পরেই পর্দ্দা-ছেঁড়া জানালার ফাঁকে টুনু আর নবাগতকে এক সঙ্গে দেখিয়া ফেলার ভিতরে একটা বড় রকমের প্রলয় ঘটিয়া গেল। বিকালেও আগের মত হওয়া গেল না, পরদিনও গেল না।
এতদিনের সাধনা, এতদিনের অভ্যাস, ভবিষ্যতের ভাবনা কিছুই কাজে লাগিল না বাঙ্গার। বাঙ্গা কোনমতেই স্বামীর সঙ্গে সহজ স্বাভাবিক ব্যবহার করিতে পারিল না।
বিধু কতকটা নীরব গাম্ভীর্য্যের সঙ্গেই তার পরিবর্ত্তনটা লক্ষ্য করিয়া গেল। কিন্তু সেও যে কিরকম সমস্যায় পড়িয়া গিয়াছে, প্রকাশ পাইতে বাকী থাকিল না। বিধুর দাড়ি-গোঁপ ভয়ানক কড়া, খুব ভাল করিয়া চাহিবার পরও হঠাৎ দেখিলে মনে হয় যেন নিষ্ঠুরতার একটা প্রকাশ্য আবরণ। এই রকম মুখে দুর্ভাবনার সঞ্চার হওয়ায় বাঙ্গার সর্ব্বাঙ্গ ভয়ে অবশ হইয়া আসিল। ভয়ে ভয়ে শেষ পর্যন্ত সে নিজেই কৈফিয়ত দিয়া বলিল, ‘দ্যাখো, আমার শরীলটা সত্যি ভাল নেই। দুদিনের জন্য এলে আমি এরকম ব্যবহার করছি বলে কিছু যেন মনে করো না তুমি, কেমন?’
‘না, কিছু মনে করিনি।’
‘এতবার এসেছে, কোনবার আমার মুখ ভার দেখেছ?’
‘না, তা দেখিনি।’
‘এবার হাসিখুসী থাকতে পারছি না—কি যেন হয়েছে। হবে আর কী, শরীলটা ভাল নেই। এবারটি আমায় মাপ করবে না?’