পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১
মহাজন

 এ এক ধরণের প্রেমালাপ। দিনের বেলা ঘরের বারান্দায় সকলের চোখের সামনে বসিয়া নাতিকে কোলে করিয়া এ ধরণের গভীর ও তীব্র আবেগ-ভরা প্রেমালাপ করিতে হয়। আড়ালে চুপি চুপি ফিস্ ফিস্‌ করিয়া এসব প্রেমালাপ চলে না, তার মত বেহায়াপণা আর নাই। দুজনের বয়স এখন অনেক পিছাইয়া দিলে, নাতিকে বহুদূর ভবিষ্যতে সঞ্চিত করিলে, বাঙ্গাকে টুনুর মত হাল্কা ছিপছিপে একটি নববিবাহিতা মেয়ে, আর বিধুকে টুনুর জামায়ের মত ফিটফাট নববিবাহিত ছেলে করিয়া দিলে, দুজনের এই চমৎকার মানানসই প্রকাশ্য প্রেমালাপ যেমন অকথ্য বেহায়াপণায় দাঁড়াইয়া যায়, আড়ালে এই প্রেমালাপ তেমনি বেহায়াপণা। এমন জটিল মানুষের জীবনের এই দিকটা!

 পূজা গেল। বিধু গেল না। বলিল, ‘এই যাব আজকালের মধ্যে। দুটো দিন থাকি।’

 অন্যবার এই কথায় বাঙ্গার আনন্দে পাগলামি করার কথা, এবার তার শ্রান্ত চোখ দুটি জলে ভরিয়া গেল। টুনু একজনের সঙ্গে সেইদিন কয়েক ঘণ্টা আগে চলিয়া গিয়াছে, শুধু এজন্য অবশ্য নয়, অন্য কারণও ছিল। প্রকৃতপক্ষে, অন্য কারণগুলিই প্রধান কারণ। সেইজন্য পাগলামি সে করিল অনেক রকম, কিন্তু আনন্দে পাগল হইতে পারিল না। কেবল টুনুর জন্য চোখে জল আসিলে সে অনায়াসে স্বামীর আরও দুটো দিন থাকিবার কথা শুনিয়া মুখে হাসি-কান্নার শোভা ফুটাইয়া স্বামীকে দেখাইতে পারিত। চাবির গোছাটায় অসঙ্গত আওয়াজ তুলিয়া বলিতে পারিত, ‘সত্যি আরও দুটো দিন থাকবে? বল কি গো! এবার কোন্‌দিকে সূয্যি উঠছে দেখতে হবে তো!’

 বিসর্জ্জনের দশমীর পরের পূর্ণিমা আসিল, তবু বিধুশেখরের যাওয়ার