পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩
মহাজন

 গ্রাম্য মেয়ে এভাবে পথের পানে চাহিয়া চাহিয়া দিন কাটানর কথা বলিলে গুরুতর পরিস্থিতির উদ্ভব না হইয়া পারে?

 বিধুশেখরের কামান কড়া দাড়িগোঁপের নিষ্ঠুর আবরণে ঢাকা মুখ হঠাৎ এমনভাবে বিকৃত হইয়া গেল যে, দেখিলে ভয় হয়। রাগে আগুন হইয়া সে বলিতে লাগিল ‘সারা বছর কাঁদ! পথের পানে চেয়ে দিন কাটাও! এতদিন বলতে পারনি এ কথাটা? এতকাল কাঁদতে পারনি একটু? সারা বছর আশায় আশায় থেকে বাড়ী ফিরতাম, চৌকাটে পা দিতে না দিতে একগাল হাসি নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াতে, যে কটা দিন থাকতাম, কি স্ফূর্ত্তি, কি সব হাসি-তামাসা, হৈ চৈ ব্যাপার! কি করে জানব তুমি সারা বছর কাঁদতে? কি করে জানব তুমি পথের পানে চেয়ে দিন কাটাতে? গুণতে তো জানি না আমি!’

 চীৎকার শুনিয়া সকলে ছুটিয়া আসিয়াছিল, ছেলে কোলে করুণার মেয়ে পর্য্য‌ন্ত। কিন্তু বাঙ্গা কারও দিকে দৃষ্টিপাতও করিল না, রুদ্ধশ্বাসে জিজ্ঞাসা করিল, ‘আগে জানলে আমায় নিয়ে যেতে?’

 বিধুশেখর আরও রাগিয়া বলিল, ‘যেতাম না? নিয়ে যাবার জন্যই তো এসেছি প্রত্যেকবার। তোমার রকম সকম দেখে ভড়কে যেতাম। আমায় ছাড়া যে অমন স্ফূর্ত্তিতে থাকতে পারে, তাকে আর সঙ্গে নিয়ে যাবার কথা বলতেই সাধ হত না।’

 কত পাগলামিই মানুষ জানে! এসব কাণ্ড-কারখানা দেখিলে মনে হয় না, মানুষের পক্ষে ভাব-প্রবণতা মহাপাপ, যে মানুষ হাসির পিছনে কান্না, আর কান্নার পিছনে হাসি খুঁজিয়া পায় না—ত্রিশ বছর সন্ধান করিয়াও পায় না? বিশেষতঃ, কয়েকজন কবি পৃথিবীর মানুষের জন্য কাব্য-রস পরিবেশন করিয়া গিয়াছেন এবং কাব্য-রসটা সব রসের সেরা