পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বন্যা

 তারপর ভৈরবকে শেষরাত্রির দিকে একেবারে ঘরের চালায় উঠিতে হইল। আজ কতকাল এই শনে-ছাওয়া চালা তাকে সপরিবারে আকাশের কৃপণ অকৃপণ বর্ষণ হইতে আড়াল করিয়াছে, আকাশ-ফাটা রোদে যোগাইয়াছে ছায়া। এই চালার নীচে কত দিনরাত্রি কাটিয়াছে, কে জানিত কেবল তলায় নয়, একদিন রাত্রিশেষে দরকার হওয়া মাত্র উপরেও তার এমন আশ্রয় মিলিবে?

 ঢালু ভিজা চালা বাহিয়া একেবারে ডগায় উঠিয়া ভৈরব পা ছড়াইয়া বসিয়া রহিল। এখন বৃষ্টি নাই। আকাশের একদিকে আল্‌গা মেঘ, অন্যদিক ফাঁকা। ফাঁকায় তারাও আছে, ছোট একটি চাঁদও আছে। মেঘ যেন ঘষামাজা করিয়াছে আকাশকে, বৃষ্টি যেন ধুইয়া মুছিয়া দিয়াছে,—কি জ্বলজ্বলে সব তারা, কি জ্যোৎস্না বিলানোর সখ অতটুকু আনমনা ক্ষয়ধরা চাঁদের!

 অথচ পৃথিবী ঝাপসা, চারিদিকে ভাল নজর চলে না। চাঁদ আর তারার আলো যেন পৃথিবীর জন্য নয়, যেটুকু পায় পৃথিবী সে শুধু উপচানো দয়া। উত্তরে আমবাগানের বন, আবছা অন্ধকারের একটা এলোমেলো স্তূপ। পশ্চিমে সেই আবছা অন্ধকারই সমতল করিয়া বিছানো,—ক’দিন আগে ছিল ফসল ভরা মাঠ, এখন প্রায় নিস্তরঙ্গ জলের সমুদ্র! পূর্ব্ব আর দক্ষিণের বাড়ীগুলি নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের মধ্যে বিশাল নিশ্চল আবছা অন্ধকারের ঢেউ।