পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯
বন্যা

 মৃদু ও মধুর গলা আলতামণির, কে বলিবে একটু আগে তারই গলা দিয়া অমন ইঞ্জিনের হুইসেলের মত আওয়াজ বাহির হইয়াছিল!

 গাছের ডালে ডিঙ্গি বাঁধিয়া দু’জনে ধরাধরি করিয়া কানাইকে ডিঙ্গিতে তুলিতেই ব্যাপারটা মােটামুটি বুঝা গেল। কানাইয়ের মুখ দিয়া দেশী মদের তীব্র গন্ধ বাহির হইতেছে।

 ভৈরব বলিল, ‘বটে। এইজন্য বাঁদরটার না’য়ের দরকার হয়েছিল! না’টা হল কি রে আলতা, এ্যাঁ?’

 আল তখন ডালটার উপর বুক দিয়া হাঁপাইতেছে, উঠিবার ক্ষমতা নাই। ক্ষীণস্বরে বলিল, ‘ভেসে গেছে।’ ভৈরব চমকাইয়া বলিল, ‘ভেসে গেছে! কোন্‌দিকে গেল? হায় সব্বোনাশ!’

 আলতা কাঁদিবার উপক্রম করিয়া বলিল, ‘কোনদিকে গেল কি করে বলব মামা? আমার ইদিকে এমন সব্বেনাশ—’

 ‘সব্বোনাশ? তাের সব্বোনাশ? আমার না’ গেল, সব্বোনাশ তাের? বজ্জাতটাকে ধরলি কেন তুই, বানের জলে গাঁয়ের কলঙ্ক ধুয়ে যেত! ও ছোঁড়া যদ্দিন বাঁচবে তদ্দিন তাের সব্বোনাশ, বেটাচ্ছেলে মর্‌লে তাের হাড় জুড়ােবে।’

 ‘শাপমণ্যি দিওনা মামা—গুরুজন বটে ন’ তুমি?’

 আলতা হাঁপাইতে ভুলিয়া গিয়াছে, ভৈরবের নৌকা জলে ভাসিয়া যাওয়ার অপরাধ ভুলিয়া গিয়াছে, নীচু গলাতেও কোমলতা নাই,—গাছের ডালে ভর দিয়া এমন ভাবে মুখ তুলিয়া চাহিয়াছে যেন সাপের মত ছােবল দিবে।

 মহিম ভৈরবকে সাহস দিয়া বলিল, ‘কোথাও ঠেকে থাক্‌বে নিশ্চয়,—কাল পাত্তা মিল্‌বে।’