পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ
২৬

আছে আর একটি ছেলে। স্বামীর চাকরী নেই চারমাস, সংসার আর চলেনা, সে তাই পর্দ্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছে। এই তার প্রথম চাকরী। মাইনে? সে তা জানেনা। দুবেলা রেঁধে দিয়ে যাবে, কিন্তু খাবেনা।

 পনের টাকা মাইনে ঠিক হল। সে বোধ হয় টাকা বারো আশা করেছিল, কৃতজ্ঞতায় দু’চোখ সজল হয়ে উঠল। কিন্তু সমস্তটুকু কৃতজ্ঞতা সে নীরবেই প্রকাশ করল, কথা কইল না।

 মা বল্‌লেন, আচ্ছা, তুমি কাল সকাল থেকে এসো।

 সে মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানিয়ে তৎক্ষণাৎ চ’লে গেল। আমি গেটের কাছে তাকে পাকড়াও করলাম।

 শোন। এখুনি যাচ্ছ কেন? রান্নাঘর দেখবেনা? আমি দেখিয়ে দিচ্ছি এসো।

 কাল দেখবো, ব’লে সে এক সেকেণ্ড দাঁড়ালনা, আমায় তুচ্ছ ক’রে দিয়ে চ’লে গেল। ওকে আমার ভাল লেগেছিল, ওর সঙ্গে ভাব করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম, তবু! আমি ক্ষুণ্ণ হয়ে মার কাছে গেলাম। একটু বিস্মিত হয়েও। যার অমন মিষ্টি গলা, চোখে মুখে যার উপচে পড়া স্নেহ, তার ব্যবহার এমন রূঢ়!

 মা বললেন, পিছনে ছুটেছিলি বুঝি ভাব করতে? ভাবিসনা, তোকে খুব ভাল বাসবে। বার বার তোর দিকে এমন ক’রে তাকাচ্ছিল!

 শুনে খুসী হলাম। রাঁধুনীপদপ্রার্থিনীর স্নেহ সেদিন অমন কাম্য মনে হয়েছিল কেন বলতে পারি না॥

 পরদিন সে কাজে এল। নীরবে নতমুখে কাজ ক’রে গেল। যে বিষয়ে উপদেশ পেল পালন করল, যে বিষয়ে উপদেশ পেল না নিজের বুদ্ধি