পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭
মমতাদি

খাটিয়ে সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করল—অনর্থক প্রশ্ন করল না, নির্দেশের অভাবে কোন কাজ ফেলে রাখল না। সে যেন বহুদিন এবাড়ীতে কাজ করছে কিনা আড়ম্বরে এমন নিখুঁত হল তার কাজ। জল তোলা, মসলা বাটা, চাকরের কর্ত্তব্য; চাকরকে বারান্দায় ব’সে আরামে বিড়ি টানতে দেখেও সে অনুরোধ জানাল না, নিজেই জল তুলে মশলা বাটতে বসল। মার ধমক খেয়ে চাকর কাছে যাওয়ামাত্র শিল ছেড়ে উঠে গেল।

 কাজের শৃঙ্খলা ও ক্ষিপ্রতা দেখে সকলে তো খুসী হলেন, মার ভবিষ্যৎ বাণী সফল ক’রে সে যে আমায় খুব ভালবাসবে তার কোন লক্ষণ না দেখে আমি হলাম ক্ষুণ্ণ। দুবার খাবার জল চাইলাম, চার পাঁচ বার রান্না ঘরে গিয়ে দাঁড়ালাম, কিন্তু কিছুতেই সে আমায় ভালবাসল না। বরং রীতিমত উপেক্ষা করল। শুধু আমাকে নয় সকলকে। কাজগুলিকে সে আপনার ক’রে নিল, মানুষগুলির দিকে ফিরেও তাকাল না। মার সঙ্গে মৃদুস্বরে দু’একটি দরকারী কথা বলা ছাড়া ছটা থেকে বেলা সাড়ে দশটা অবধি একবার কাসির শব্দ পর্য্যন্ত করল না। সে যেন ছায়াময়ী মানবী, ছায়ার মতই ম্লানিমার ঐশ্বর্য্যে মহীয়সী, কিন্তু ধরা ছোঁয়ার অতীত, শব্দহীন অনুভূতিহীন নির্ব্বিকার।

 রাগ ক’রে আমি স্কুলে চ’লে গেলাম। সে কি ক’রে জানবে মাইনে-করা রাঁধুনীর দূরে থাকাটাই সকলে তার কাছে আশা করছে না, তার সঙ্গে কথা কইবার জন্য বাড়ীর ছোট কর্ত্তা ছটফট করছে!

 সপ্তাহখানেক নিজের নূতন অবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর সে আমার সঙ্গে ভাব করল।

 বাড়ীতে সেদিন কুটুম এসেছিল, সঙ্গে এসেছিল একগাদা রসগোল্লা আর সন্দেশ। প্রকাশ্য ভাগটা প্রকাশ্যে খেয়ে ভাঁড়ার ধরে গোপন