পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ
৩০

আমি নিজে মেরেছি। কাল রাত্রে গালে একটা মশা বসেছিল, খুব রেগে—

 মশা মারতে গালে চড়! ব’লে আমি খুব হাসলাম। সেও প্রথমটা আমার সঙ্গে হাসতে আরম্ভ ক’রে গালে হাত ঘষতে ঘষতে আনমনা ও গম্ভীর হয়ে গেল। তার মুখ দেখে আমারও হাসি বন্ধ হয়ে গেল। চেয়ে দেখলাম, ভাতের হাঁড়ির বুদ্‌বুদ্‌ফাটা বাষ্পে কি দেখে যেন তার চোখ পলক হারিয়েছে, নীচের ঠোঁট দাঁতে দাঁতে কামড়ে ধরেছে, বেদনায় মুখ হয়েছে কালো।

 সন্দিগ্ধ হয়ে বললাম, তুমি মিথ্যে বলেছ দিদি। তােমায় কেউ মেরেছে।

 সে হঠাৎ কাঁদ কাঁদ হয়ে বলল, না। ভাই, না। সত্যি বলছি, না। কে মারবে?

 এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে না পেয়ে আমাকে চুপ ক’রে থাকতে হল। তখন কি জানি তার গালে চড় মারার অধিকার একজন মানুষের আঠার আনা আছে! কিন্তু চড় যে কেউ একজন মেরেছে সে বিষয়ে আমার সন্দেহ ঘুচল না। শুধু দাগ নয়, তার মুখ চোখের ভাব, তার কথার সুর সমস্ত আমার কাছে ওকথা ঘােষণা ক’রে দিল। বিবর্ণ গালে তিনটি রক্তবর্ণ দাগ দেখতে দেখতে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। আমি গালে হাত বুলিয়ে দিতে গেলাম, কিন্তু সে আমার হাতটা টেনে নিয়ে বুকে চেপে ধরল।

 চুপি চুপি বলল, কারাে কাছে যা পাইনা, তুমি তা দেবে কেন?

 আমি অবাক হয়ে বললাম, কি দিলাম আমি?

 এ প্রশ্নের জবাব পেলাম না। হঠাৎ সে তরকারী নামাতে ভারি ব্যস্ত