পাতা:সহরতলি (দ্বিতীয় পর্ব্ব) - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সনহািল্লতলী ধনঞ্জয় খুন্সী হইয়া বলিল, “আমিও তো তাই বলছি। তাড়াহুড়োর : কি আছে ? পায়ের ব্যাথাটা কামুক, দু’দিন পরে গেলেও চলবে।” বলিতে বলিতে ধনঞ্জয়ের মুখে ম্যাজিকের মেঘের মত বিষাদের ছায়া ঘনাইয়া আসিল ৷-“তোমার পা দু’দিন পরে সেরে যাবে, আমার পা কিন্তু কোনদিন ঠিক হবে না। চাদের মা ।” অনেকদিন যশোদা ধনঞ্জয়ের মুখে তার কাটা পায়ের জন্য নালিশ শোনে নাই, বিষাদের ছাপটা যদিও চোখে পড়িয়াছে সব সময়েই । হাঁটুর নীচেই ডান পা’টি ধনঞ্জয়ের শেষ হইয়া গিয়াছে, ঘা শুকাইয়া খানিকটা মসৃণ হইয়াছে, বাকীটা হইয়া আছে এবড়ো-খেবড়ো । দেখিলে যশোদার এখনো বেদনা আর বিতৃষ্ণা মেশানো একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়, কতকটা প্রিয়জনের মৃতদেহ দেখিয়া বিব্রত হওয়ার মত । “আমারও ডান পা’টা জখম হয়েছে, দেখেছি ?” এতক্ষণ খেয়াল হয় নাই, এবার খেয়াল করিয়া এই অত্যাশ্চৰ্য্য যোগা--- যোগে ধনঞ্জয়ের বিস্ময়ের সীমা থাকে না । “হয়তো আমার পা’টাও তোমার মত কেটে বাদ দিতে হবে ।” 'ন না, তা কি হয়, কি যে বল তুমি চাদের মা !” “হতে পারে তো ? পাটা যদি পেকে ফুলে ওঠে, তারপর পচে গলে । যায়, তারপর ডাক্তার করাত দিয়ে কেটে তোমার পায়ের মত করে” দেয়, বেশ হয় তা হ’লে, না ?” কথা শুনিলে আর কথা বলিবার ভঙ্গি দেখিলে মনে হয় যশোদার মনে বুঝি ঘোরতর বিকার আসিয়াছে। পায়ের পাতায় তার যেভাবে আঘাত লাগিয়াছে তাতে পাট পাকিয়া ফুলিয়া উঠিতে অবশ্য পারে এবং শেষ । ܒܒ