পাতা:সহরতলি (দ্বিতীয় পর্ব্ব) - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনহরতলী মধ্যেই প্ৰকাণ্ড এক একটা বাড়ী যে সম্পূর্ণ হইতেছে! কোন কাজেই মানুষের যেন আঞ্জকাল আর সময় লাগে না-সহরের মানুষের। নূতন যুগের নূতন মন্ত্রে ম্যাজিকের মত কাজ হইয়া যায়। ঘরের মধ্যে যশোদার শীত করিতেছিল। আর তাকে পীড়ন করিতেছিল ঘরের রিক্ত নগ্নতা । মেঝেতে ছড়ানো পড়িয়া আছে জঞ্জাল, একটুকরা ছেড়া কাগজ যশোদা ঘরে জমিতে দিত না, যা কিছু অকেজো, যা কিছু পরিত্যজ্য সব যশোদা চিরদিন নিৰ্ব্বিকার চিত্তে ফেলিয়া দিয়াছে,-যদি কাজে লাগে ভাবিয়া ঘরের জঞ্জাল সঞ্চয় করার মত ভীরু সে কোনদিন ছিল না। তবু, দুঃসাহসীর মনের গোপন ভীরুতার মত এত জঞ্জাল যে ঘরের মধ্যে কোথায় লুকাইয়া ছিল ! শূন্য দেয়ালে শুধু নানা রকম দাগ আর একটি পুরানো বাংলা দেয়াল-পঞ্জী,-জীবনবীমা কোম্পানীর বিজ্ঞাপন । দেয়াল-পঞ্জীর ছবিটিতে একজোড়া নারী ও পুরুষ ও তাদের গণ্ডাখিানেক ছেলেমেয়ের দেহে স্বাস্থ্য আর মুখে আনন্দের হাসি যেন ধরিতেছে না। প্ৰথমে ছবিটা দেখিলেই যশোদার রাগ হইত, মনে হইত। রেষারেষি করিয়া বিজ্ঞাপন দিয়া দিয়াই মানুষ আজকাল মিথ্যাকে ফেনাহয় ফাপাইয়। তুলিতেছে, সর্বত্র ছড়াইয়া দিতেছে। অনেক বিষয়ের মত এবিষয়েও যশোদার একটি নিজস্ব মতামত আছে । বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর বিশ্লেষণ অবশ্য যশোদার মতামতের পিছনে নাই, পাণ্ডিত্যের ফেনা সঞ্চয় করিবার সুযোগও তার ঘটে নাই, মুখে ফেনা তুলিয়া জাবরও সে কাটে না, কাজে লাগায় শুধু নিজের উপলব্ধি ও সাধারণ বুদ্ধিকে। প্রচারের আশ্রয়ে মিথ্যা যে পুষ্ট হয়