পাতা:সহরতলি (দ্বিতীয় পর্ব্ব) - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনহরতলী যশোদার সাড়া পাইয়াই সুব্রতা তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসে। জলস্তর চোখ, ভিজা গাল আর ফুলোনো ঠোঁটে কি ছেলেমানুষ আর সুন্দরই তাকে দেখায় । মনে হয় গিন্নিপনার অভ্যাসটাও যেন তার এখনকার মত ঘুচিয়া গিয়াছে। শিশুর মত যশোদার কাছে সে নালিশ জানায় । “চায়েব জিনিযপত্র কিনবার পয়সা পৰ্য্যন্ত নেই দিদি। বললাম, এমনি মোটা-মোটা চুড়ি ছ’গাছা করে” কেউ একহাতে পরে না, দু’গাছা চুড়ি বেচে দিয়ে এস। তা, কিছুতেই বেচাবে না। কি হয় বাড়তি চুড়ি বেচিলে ?” “চায়ের জিনিষপত্র কেনার জন্য বৌ-এর গয়না বেচব !”-অজিত বলে । “কেন, পৌ কি পাব ?--সুব্ৰতা বলে । কঠিন সমস্যা সন্দেহ নাই। পেী-এর গয়না বেচার সমস্যা যশোদার আগের ভাড়াটেদের মধ্যেও অনেকবার দেখা দিয়াছে, কিন্তু সমস্যাটা তখন দাড়াইত ঠিক উল্টা । গয়না বেচিতে স্বামীরাই ছিল উৎসুক, বৌয়েরা ছিল বিবোপী । কলহ ও ছিল তাদের ভিন্ন ধরণের, কথা কাটাকাটি ছিল যেন গালাগালি আর অভিশাপ, মারামারির ভূমিকার মত। দু'একটি স্বামী যে বেীকে চড়-চাপড়টা বসাইয়া দিত না, তাও নয়। অতীতে স্বামীস্ত্রীর যত কলচে সে মধ্যস্থত করিয়াছে তার সঙ্গে এই নব দম্পতীর কলহের পার্থক্যটা এত বেশী স্পষ্ট হইয়া যশোদার কাছে ধরা পড়ে যে, এদের মিল ঘটানোর লাগসই উপায় সে ভাবিয়া পায় না। মিলমের চেয়ে মধুর যে বিরোধ, তার কি প্ৰতিবিধান আছে ? একরকম জোর করিয়া রান্নাঘরে ধরিয়া নিয়া গিয়া দু’জনকে সে চ্যা আর হালুয়া খাওয়ায় । মন কঁদিতে থাকে নন্দ আর সুবর্ণের অঙ্গ। ܗܘ ܐ