“ঐরূপ স্বেচ্ছাচারিতারূপ স্বাধীনতায় বঙ্গমহিলাদের কাজ নাই। তাঁহাদের যে স্বাধীনতা আছে, তাহাই প্রকৃত স্বাধীনতা। কে বলে যে বঙ্গমহিলারা পিঞ্জরাবন্ধ পক্ষীর ন্যায় গৃহরৃপ কারাগারে আবদ্ধ আছে? তাঁহারা কি আপন আপন ইচ্ছামত ধর্ম্মকম্ম করিতে পারেন না? ইচ্ছানুসারে অশন বসন প্রাপ্ত হন না? আত্মীয়স্বজনের বাটীতে কি গমনাগমন করিতে পারেন না? তাঁহাদের মন কি স্বাধীন নহে? তবে তাঁহারা পরাধীনতা-শৃঙ্খলে অবস্থিতি করিতেছেন, ইহা কি প্রকারে সম্ভবপর হইতে পারে?
“বঙ্গমহিলাদের অনেক অভাব আছে, একথা আমরা পূর্ব্বাবধিই স্বীকার করিয়া আসিতেছি, আর সেই সকল অভাব যে ক্রমে ক্রমে মোচন হইবে এক্ষণে তাহার আকার-প্রকারও দেখিতেছি। শিক্ষাভাব এদেশীয় স্ত্রীলোকদের একটি বিশেষ অভাব ছিল, কিন্তু অধুনা বঙ্গাঙ্গানাগণের জন্যে সেই শিক্ষার দবার মুক্ত হইয়াছে। তাঁহাদের বত্তমান পোষাক পরিবত্ত হউক, উচ্চতর শিক্ষা লাভ হউক, তখন দেখা যাইবে যে তাঁহাদের ন্যায় যথার্থ সভ্য, ভদ্র ও স্বাধীনচিত্ত স্ত্রী জগতের আর কোথায়ও নাই। (সংস্কৃত গ্রন্থকারেরা অনেক সস্থলে ভারতীয় নারীজাতিকে সন্ত্রীরত্ব বলিয়া উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন।) তখনই দেখিব যে বঙ্গস্ত্রী রত্নবিশেষ
অনাথিনী। ইহাই মহিলা-পরিচালিত প্রথম মাসিক পত্রিকা; (২) সম্পাদিকা-থাকমণি দেবী; প্রকাশকাল-শ্রাবণ ১২৮২ (জলাই ১৮৭৫)। ইহার প্রথম সংখ্যা পাঠে ভূদেব মুখোপাধ্যায়-সম্পাদিত ‘এডুকেশন গেজেট’ (২১। শ্রাবণ ১২৮২) লিখিয়াছিলেন:
“অনাথিনী (মাসিক পত্রিকা)-শ্রীমতী থাকমণি দেবী কর্তৃক সম্পাদিত। আজিমগঞ্জ বিশ্ববিনোদ যন্ত্রে মুদ্রিত। এই শ্রাবণ মাস হইতে ইহার কায্য আরম্ভ হইয়াছে। স্ত্রীলোকের দবারা সম্পাদিত সাময়িকপত্র এ দেশে এই আমরা প্রথম দেখিলাম। পত্রিকাখনি স্ত্রীশিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদিগের অনল্প আহ্লাদের কারণ হইবে।”
২ ‘অনাথিনী’ প্রকাশিত হইবার তিন মাস পূবে নসীপূর হইতে ভুবনমোহিনী দেবী-সম্পাদিত ‘বিনোদিনী’ প্রকাশিত হয়। কেহ কেহ ইহাকে মহিলাপরিচালিত প্রথম মাসিক পত্রিকার গৌরব দিয়া থাকেন। প্রকৃতপক্ষে “ভুবনমোহিনী দেবী”-এই নামের আড়ালে ‘ভুবনমোহিনী প্রতিভার কবি নবীনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় পত্রিকাখানি পরিচালন করিতেন। সুতরাং ইহাকে মহিলা-পরিচালিত মাসিক পত্রিকা বলা উচিত হইবে না।