পাতা:সার্বজনীন - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RS সার্বজনীন দু’চার জন যারা সে চেষ্টা করেছিল তারা ভেসে গেছে ভিড়ের অসমর্থনে। সাধন বলে, শুধু থার্ড ক্লাশের যাত্রী না থাক, থার্ড ক্লাশের যাত্রীরাই একটু অভদ্র হয় স্বার্থপর হয়, যায়গা নিয়ে মারামারি করে, এটা চিরকালের মিথ্যা কথা। আমরা ভেবে দেখি না, উচু ক্লাশে যেটুকু ফাকা ভদ্রতার দেখা মেলে সেটা শুধু ওটুকু ভদ্রতা করার সুযোগ সুবিধা থাকে বলেই! আজকাল উচু ক্লাশেও ভিড় হয়-অভদ্রতা স্বার্থপরতা থেকে যায়গা নিয়ে মারামারি। পৰ্য্যন্ত কিছুই বাদ যায় না। বরং থার্ড ক্লাশের চেয়েও বিশ্ৰীভাবে অভদ্রভাবে হয় | পঙ্কজ বলে, আমারও উচু ক্লাশ নীচু ক্লাশ সম্পর্কে ওইরকম ধারণা ছিল। যুদ্ধের সময় কলকাতায় যখন জাপানী বোমার আতঙ্ক হয়, সেবার ট্রেণে উচুক্লাশের ভদ্রতা আর মার্জিত রুচির চরম পরিচয় পেয়েছিলাম। পঙ্কজ সেই অভিজ্ঞতার কথা বলে। বড়লোকেরাই বেশীর ভাগ সহর ছেড়ে ভাগবে তাড়াতাড়ি-ফাষ্টক্লাশের টিকিট কিনেও গাড়ীতে উঠবার জন্য ভিড় ঠেলে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। অন্যের ছেলেপিলে আর মেয়েদের সরিয়ে নিজের পরিবারটি নিয়ে গাড়ীতে ওঠার জন্য সে কি ঝগড়া মারামারি । যারা আগে উঠতে পেরেছে কামরার মধ্যে যায়গা দখল নিয়ে তারা প্ৰত্যেকে প্ৰত্যেকের শত্ৰু, কিন্তু দরজা বন্ধ রেখে বাইরে থেকে আর কেউ উঠে যাতে তাদের অসুবিধা ঘটাতে না পারে সে জন্য তাদেরই আবার কি কুৎসিত একতা । থার্ড ক্লাশের মানুষ এ ধরণের স্বার্থপরতা জানে না। জোট বেঁধে তারা বিপন্ন মানুষকে গাড়ীতে উঠতে বাধা দেয় না। উঠবার যদি সাধ্য থাকে, ওঠে ! আগে উঠে বসেছি, এবার নিজেদের কষ্ট বাড়বে বলে গায়ের জোরে তোমায় উঠতে দেব না, তুমি ছেলেপুলে স্ত্রীকে নিয়ে