পাতা:সার্বজনীন - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3R6t সাৰ্বজনীন গণেশ চুপ করে থাকে। চুপ করে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই। ব্যাপারটা আরেকবার ধারণা করার চেষ্টা করে পঙ্কজ। শুধু গণেশের নয়, গাড়ীর বোধহয় অধিকাংশ পরিবারই এমনি অনিশ্চিতের দিকে যাত্ৰা সুরু করেছে। এবং গাড়ীও আজ এই একটি চলছে না। কলকাতার দিকে। গা ব্যথা হয়ে গেছে, পা দুটো আড়ষ্ট লাগছে। ধীরে ধীরে চোখ বুজে কষ্টটা ভুলবার চেষ্টা করে। মনটা আবার গভীর ভাবে নাড়া খেয়েছে। কি বিশৃঙ্খল অনিশ্চিত অবস্থা দেশে। মানুষের যেন খেয়ে পরে মুখে শান্তিতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই, চারিদিকে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে থাকতেই হবে, দুঃখ দুৰ্দশা চরমে উঠতেই হবে। পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধ বেধে বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানের আবিষ্কার ভয়ঙ্কর সব মারণাস্ত্ৰ নিয়ে খুনো খুনি চলবে, দুৰ্ভিক্ষ উজার করে দিয়ে যাবে, পরণের কাপড়ের জন্য লোকে পাগল হবে। যুদ্ধ থেমে গেলেও সাধারণ মানুষের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবার উপায় থাকবে না। আরেকটা যুদ্ধের নানা সূচনা চালাবে দানবেরা । ধনীর চেয়ে বড় জঞ্জাল জগতে আর নেই। পুরাণো পচা গলা সংস্কার ও প্ৰবৃত্তির সব চেয়ে নিরাপদ আশ্রয়, সভ্যতাকে ব্যৰ্থ করার সব চেয়ে বড় অজুহাত! এ আঘাত কি মানুষ ভুলতে পারবে ? মাঝে মাঝে ষ্টেশনে গাড়ী থামছিল। বাইরে না তাকালেও বেশ বোঝা যায় এত রাত্রেও ষ্টেশনগুলি মানুষে বোঝাই হয়ে আছে-সকলেই তারা ট্ৰেণের প্রত্যাশী নয়। নিরুদ্দেশের যাত্রীরা কিছু কিছু আশ্রয়ের খোজে ষ্টেশনে ষ্টেশনে নেমে পড়বে তাতে আশ্চৰ্য্য হবার কিছু নেই, তারপর অদৃষ্ট যা থাকে হবে। প্ৰত্যেক ষ্টেশনে গাড়ীতে ওঠার জন্য মানুষের কাকুতি মিনতি প্ৰাণের