পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

 “প্রিয় যেমন বাজান, তার প্রেম চঞ্চল জেনেও আমি তেমনি নাচি। গাছ স্বভাবতঃই স্তব্ধ (সাড়া দেয় না) তবু লতা তাকে জড়িয়ে থাকে।”

 প্রাকৃত কবিদের কবিতার ভাব অনেক সময় খুব গভীর এবং মধুর হ’লেও সংস্কৃত কবিতার মতো গম্ভীর এবং উদাত্ত ধ্বনির অভাবে সেগুলি বিশেষ করে বর্তমান যুগের আমাদের কানে বেসুরো এবং দুর্বল লাগে। যে যুগে ভারতবর্ষের সভ্যতা গৌরবের চরম শিখরে উঠেছিল, সেই যুগেই ভারতবর্ষের সর্বত্র মেয়েদের প্রাকৃতে কথা ব’লতে দেখা যায়, অবন্তিসুন্দরীর মতো সংস্কৃতজ্ঞা নারীরাও কাব্য রচনার সময় প্রাকৃত ব্যবহার করতেন। জনসাধারণের সঙ্গে নিজেদের ঐক্য স্থাপনের জন্য এই ব্যবহার সমর্থনযোগ্য হ’লেও একই বাড়ীতে শিক্ষিত পুরুষ সংস্কৃতে এবং নারী প্রাকৃতে কথা কইতেন, এটা যেন কেমন অস্বাভাবিক লাগে। বলা বাহুল্য সংস্কৃত যেদিন থেকে ঘরের মধ্যে প্রাকৃতকে আসন ছেড়ে দিয়ে নিজে দরবারে গিয়ে বসল, সেদিনই তার অধঃপতনের সূত্রপাত আরম্ভ হ’ল। আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে বাংলা ভাষা প্রাকৃতের থেকে নিজের বৈশিষ্ট্য নিয়ে ‘ভিন্ন’ হ’তে আরম্ভ করে, গত শতাব্দীর প্রথম দিকেও বাংলা গদ্যে প্রাকৃতের প্রভাব দেখা যায়। গত শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে প্রধানতঃ বিদ্যাসাগর, ভূদেব, বঙ্কিম, মধুসূদন এবং রবীন্দ্রনাথের চেষ্টায় বহু সংস্কৃত শব্দ আহরণ করে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ এবং সবল হয়েছে সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নেই। বাংলায় বর্তমান যুগের নারী কবিদের লেখায় ভাষার গভীরতা যেমনই থাক না থাক, ভাষার স্বাচ্ছন্দ্য গাম্ভীর্য এবং মাধুর্য প্রাকৃত কবিদের লেখার