পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৮৫

মীরাবাইয়ের কথা বলছিলাম। রাজপুতনার এক পরম বৈষ্ণব রাঠোর ভূস্বামীর গৃহে আনুমানিক ১৫০৪ খৃষ্টাব্দে এই পরম ভক্তিমতী নারীর জন্ম হয়। তাঁর অলৌকিক সৌন্দর্যখ্যাতি শুনে মেবারের রাণা সংগ্রামসিংহ তাঁকে পুত্রবধূরূপে নিয়ে আসেন, কনিষ্ঠ পুত্র কুমার ভোজের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে। বৈষ্ণব মীরার শৈব শ্বশুর-কুলে এসে তখন থেকেই বহু নির্য্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল, দশ বছর পরে স্বামীর অকালমৃত্যুতে তাঁর সংসারের সব সুখই ফুরিয়ে গেল, শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন পরম ভক্তিমতী, পার্থিব স্বামীকে হারিয়ে তিনি বিশ্বের স্বামীর সন্ধানে যেদিন ভক্তির উদার রাজপথে যাত্রা করলেন সেদিনও আত্মীয়-স্বজন সকলেই তাঁকে ধিক্কার দিল, কিন্তু কোন বাধা মানবার মতো মনের অবস্থা তাঁর তখন ছিল না। রাজগৃহে বহু সাধু সজ্জনের সমাগম আরম্ভ হ’ল, তাঁর ভাসুর বিক্রমসিংহ তাঁকে লজ্জাহীনতার জন্য তিরস্কার করেন, শেষে হত্যা করবার জন্য বিষও পাঠান, ননদ উদাবাই তাঁকে অনেক রকম করে বোঝাবার চেষ্টা করেন, কিন্তু কিছুতেই কিছু হ’ল না। অতিরিক্ত নির্যাতনে বিদ্রোহী মীরা শুধু বললেন:

“হেরী ম্যাঁয় তো প্রেমদিওয়ানী, মেরা দরদ না জানে কোঈ।”

 সখি, আমি যে প্রেমে পাগল হয়েছি, আমার ব্যথা কেউ বুঝ্‌বে না।

“প্যারে দরশন দীজ্যো আয়,
তুম বিন রহ্যো ন জায়।
জল বিন কঁবল চন্দ বিন রজনী;
ঐ সে তুম দেখ্যা বিন সজনী”