পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
৯১

 ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনে নারীর অধিকার খুব বেশী সঙ্কুচিত হয়েছিল এ কথা সত্য, কিন্তু তার প্রধান ক্ষেত্র ছিল রাজধানী এবং বড় বড় সহর। সুদূর পল্লীতে, যেখানে মুসলমান রাজপুরুষদের যাতায়াত ছিল না, সেখানে অবরোধ-প্রথারও ততদূর কড়াক্কড়ি হয়নি। ছেলে মেয়ে সেখানে দশ এগার বছর বয়স পর্যন্ত এক সঙ্গেই পড়ত এবং আজও পড়ে। বাংলার নানা উপকথায়, ‘সখী সোনার গল্পে’ এবং ‘চন্দ্রাবতী জয়চন্দ্রে’ পাঠশালায় বাল্যপ্রণয়ের ব্যাপারে আমরা এর প্রমাণ পাই। সহরের সম্ভ্রান্ত হিন্দু ঘরে তখন জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন পূর্বে উক্ত “খড়দার মা গোঁসাইদের” নেতৃত্বে শিক্ষিতা বৈষ্ণবীরা এবং মুসলমান ঘরে ‘আতুন’ বা গৃহশিক্ষয়িত্রীরা। এই যুগের রাজা বাদশাদের অন্তঃপুরে যে সব বোরখা-ঢাকা পর্দানসীন মেয়েরা বাস করতেন, তাঁদের সকলের সংবাদ আমরা পাই না, তবে যেটুকু পরিচয় পাই, তাতে এ কথা জোর ক’রে বলা চলে যে তাঁরা নিতান্ত অশিক্ষিতা ছিলেন না। পাঠান রাজত্বে অবরোধ প্রথা অগ্রাহ্য ক’রে বাইরে এসেছিলেন সুলতানা রজিয়া। তিনি যে শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন তা নয়, বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, চরিত্রবলে রাজনীতি এবং শাস্ত্রজ্ঞানে তিনি সেই কুৎসা দলাদলি ষড়যন্ত্রের যুগেও প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। তিনি চৌগান (পোলো) খেলতেন, বাজপাখী নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতেন, প্রকাশ্য দরবারে বসে পুরুষের বেশে সাম্রাজ্য শাসন করতেন, আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখতেন, অত্যাচারীকে দণ্ড এবং গুণীকে পুরস্কার দিতেন। তিনি নিজে বিদুষী ছিলেন, সাহিত্য আলোচনায় এবং সাহিত্যিকদের উৎসাহ দানে তাঁর অসামান্য